চট্টগ্রাম রেলস্টেশন এখন মাদক সিন্ডিকেটের নিরাপদ ঘাঁটি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় প্রতিদিন প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা। পরিত্যক্ত রেল কলোনি ও ঘরগুলো হয়ে উঠেছে মাদক মজুদের গুদাম। আর এই গোটা নেটওয়ার্কের নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন এক সময়ের বরিশাল কলোনির কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী রাজীব দাস ওরফে ‘ডাইল রাজীব’।
নগরীর কোতোয়ালী, ডবলমুরিং ও জিআরপি থানায় (রেলওয়ে পুলিশ) অস্ত্র ও মাদকসহ এক ডজনের বেশি মামলার আসামি রাজীব। বর্তমানে আড়াল থেকে সহযোগী ও কর্মচারীদের মাধ্যমে পুরো রেলস্টেশন এলাকার মাদক বেচাকেনা নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনের কিছু অসাধু সদস্যকেও মাসিক হারে মাসোহারা দিয়ে দেদারসেই চলছে রাজীবের এই মাদক সিন্ডিকেট।
রাজীবের ছায়া রাজত্বে রেলস্টেশন
নতুন ও পুরাতন স্টেশনের ভেতর-বাইরে, প্ল্যাটফর্ম, পার্কিং, এমনকি ফলমন্ডির পাশের গলিতেও সন্ধ্যা নামলেই জমে ওঠে মাদকের হাট।
সরেজমিনে দেখা গেছে, স্টেশনের কুলি-মজুর বা দোকান কর্মচারীর বেশে রাজীবের কর্মচারীরা ফেরি করে মাদক বিক্রি করছে। কেউ গাঁজা টানছে প্রকাশ্যে, কেউ ফেনসিডিল নিচ্ছে ঝুপড়ি ঘর থেকে।
গেল দুই মাসে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানায় মাদক আইনে ১৭টি মামলা হলেও থামানো যায়নি এই মাদকচক্রের রুটিন।
সিন্ডিকেটের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক
মাদকের গডফাদার রাজীবের অধীনে কাজ করে অন্তত ডজনখানেক সহযোগী। এরমধ্যে জামাই খোকন, মরিয়ম, রাজু, সাগর ওরফে চোরা সাগর, মাহিন, স্বপন, জামাই ইব্রাহিম, তারেক, শরিফুল ইসলাম ওরফে ন্যাড়া শরিফ, ফারুক বাবুল, বালুর মাঠের জাহিদ, বিআরটিসির আলতাফ, মুন্না ও কালুর নাম। তাদের কাজ- মাদক সরবরাহ, টাকা তোলা এবং পুলিশের ‘শেয়ার’ ঠিক রাখা।
রাজীবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী লোকমানের পাশাপাশি হোসেন ও শাহিদা দম্পতি দেখভাল করেন ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি। আর এই চক্রের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় রয়েছে ‘ছোট জুয়েল’, যার দায়িত্ব খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে টাকা তোলা ও রেল পুলিশের অসাধু সদস্যদের হাতে মাসোহারা পৌঁছে দেওয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলস্টেশনের কয়েকজন কর্মচারী জানান, মাসোহারা বন্ধ হলে পরদিনই অভিযান নামে। আবার কিছুদিন পর সব আগের মতো। রাজীবের টাকায় অনেকেই চুপ থাকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে রাজীবের সহযোগীদের অনেকেই গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন পর জামিনে বেরিয়ে ফের ব্যবসা শুরু করে। প্রশাসনের অভ্যন্তরে থাকা দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের কারণে বছরজুড়ে টিকে আছে পুরো চক্রটি।
চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত (ওসি) কর্মকর্তা শহিদ উল্লাহ বলেন, রেলস্টেশন এলাকায় মাদকসহ যে কোনো অপরাধ দমনে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। গেল দুই মাসে দুই ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে। অনেকেই কারাগারে আছে।
অভিযান, গ্রেপ্তার, মামলা সবই হচ্ছে, তবে অটুট রাজীবের মাদক সাম্রাজ্য। প্রকাশ্যে বেচাকেনা, রেলওয়ের পরিত্যক্ত ঘরে মজুদ আর প্রতিদিনের মাসোহারা সবকিছুই ঘটছে প্রশাসনের চোখের সামনেই।
তবে রাজীবকে ধরতে অভিযান চালিয়েও ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে ওসি শহিদ উল্লাহ বলেন, সম্প্রতি রাজীবকে ধরতে অভিযান চালানো হয়েছিল, কিন্তু সে পালিয়ে যায়। খুব শিগগিরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।