নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ইলিয়াসের নেতৃত্বে পুলিশের গাড়িতেই এক যুবককে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
মারধরের শিকার হওয়া যুবকের নাম মারজান উদ্দিন (২৯)। এই ঘটনায় থানা প্রাঙ্গণেও হট্টগোল সৃষ্টি করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গত ১৯ অক্টোবর রোববার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও থানা প্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার সূত্রপাত হয় নলচিরা ইউনিয়নের লামছড়ি গ্রামের একটি বিয়ে নিয়ে। গত ১৬ অক্টোবর এই বিয়েতে নিজ গ্রামের হুজুরকে দাওয়াত না দেওয়ায় মসজিদ কমিটির ক্যাশিয়ার হেলাল মাঝির সাথে বরপক্ষের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিনের (মারজানের বড় ভাই) বাকবিতণ্ডা হয়।
রোববার সকালে শাহাব উদ্দিন বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে হেলাল মাঝির নেতৃত্বে কিছু লোক তাকে মারধর করে। খবর পেয়ে শাহাব উদ্দিনের ভাই মারজান ও নাজিম ঘটনাস্থলে গেলে তাদেরও বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে আহত করা হয়। এরপর তাদের দুটি বসতঘরে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ৯৯৯ এ কল পেয়ে পুলিশ আহত ও অবরুদ্ধ শাহাব উদ্দিন ও মারজানকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
হাসপাতাল থেকে থানায় নেওয়ার পথে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন ইলিয়াসের নেতৃত্বে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মিরা পুলিশের গাড়িতে হামলা চালায়। পুলিশের সামনেই মারজানকে বেধড়ক মারধর করা হয় এবং তার শরীর থেকে সব ব্যান্ডেজ খুলে নেওয়া হয়। এ সময় পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিনহাজুল আবেদীনকেও হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। মারধরকারীরা থানার সামনে গিয়েও মারজানের ওপর হামলার চেষ্টা করে এবং ব্যাপক হট্টগোল সৃষ্টি করে।
এই ঘটনায় উভয়পক্ষের অন্তত ১১ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত মারজান উদ্দিন ও তার বড় ভাই শাহাব উদ্দিনকে থানায় সোপর্দ করা হয় এবং হেলাল মাঝির পক্ষের এক নারীসহ দুইজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হেলাল মাঝি উল্টো শাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রথমে তাকে হুমকি দেওয়া এবং পরে তাকে ও তার সঙ্গীদের হামলা ও কুপিয়ে আহত করার অভিযোগ করেছেন। উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক বাবর আজম ইলিয়াসের নেতৃত্বেই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এবং ইলিয়াস কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতার অনুসারী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ তোলেন।
যুবদল আহ্বায়ক ইলিয়াস তার উপস্থিতিতে হামলার অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, প্রথমে বিষয়টি বিয়ে সংক্রান্ত হলেও পরে এটি 'এনসিপি বনাম বিএনপি'তে পরিণত হয়েছে। তিনি উল্টো শাহাব উদ্দিনকে 'ছাত্রলীগের লাঠিয়াল' এবং সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভিড়েছেন বলে দাবি করেন।
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম আজমল হুদা জানান, এটি রাজনৈতিক বিষয় নয়, দুই গ্রুপই কোপাকুপি করেছে। তিনি শাহাব উদ্দিনকে 'ফ্যাস্টিট' এবং আগে থেকেই জনগণের তার ওপর রাগ ছিল বলে উল্লেখ করেন। পরে থানা প্রাঙ্গণে অন্য গ্রুপ এসে তাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে হট্টগোল করে। দুই পক্ষই মামলা করবে বলে তিনি জানান।