বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাস ‘স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস’ হিসেবে পালিত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরামের নেতৃত্বে ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশসহ ৫৩টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একসঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় সচেতনতা উদ্যোগ ‘গোলাপি সড়ক শোভাযাত্রা’ আয়োজন করে।

জাতীয় ক্যানসার ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক, ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী এবং বাংলাদেশের ‘গোলাপি মানব’ অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার (রাসকিন) নেতৃত্বে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, ক্যানসারজয়ী, সংস্কৃতি কর্মী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি এলেঙ্গা (টাঙ্গাইল)-সিরাজগঞ্জ বাইপাস-বগুড়া-নওগাঁ-তানোর হয়ে রাজশাহীতে পৌঁছায়। পথে স্থানীয় সংগঠন ও সাধারণ মানুষও এতে অংশ নেন। শোভাযাত্রার সময় পথসভা, সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সন্ধ্যায় রাজশাহীর সিঅ্যান্ডবি মোড়ে শিমুল মেমোরিয়াল নর্থ সাউথ স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিভিন্ন নারী সংগঠন, রোটারি ক্লাব, ইনার হুইল ক্লাবসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) রাজশাহীর জিরো পয়েন্ট এলাকায় সাধারণ মানুষকে লিফলেট বিতরণ এবং পথসভা আয়োজনের মাধ্যমে স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা কর্মসূচি চালানো হয়। এই দিন রাজশাহী থেকে নাটোর-সিরাজগঞ্জ বাইপাস-ভুয়াপুর-গোপালপুর হয়ে জামালপুর-সরিষাবাড়ী পর্যন্ত শোভাযাত্রা চলে এবং প্রায় অর্ধলাখ সচেতনতা লিফলেট বিতরণ করা হয়।

ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ড. সৈয়দ হুমায়ুন কবির বলেন, আগে স্তন ক্যান্সার ছিল মরনব্যাধি, কিন্তু বর্তমানে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সচেতনতার অভাবে নারী স্বাস্থ্যের ঝুঁকি কমে না। তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতনতা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষাই সবচেয়ে বড় শক্তি।

ডা. মো. হাবিবুল্লাহ তালুকদার (রাসকিন) উল্লেখ করেন, দেশের প্রতি বছর প্রায় ৭ হাজার নারী স্তন ক্যান্সারে মারা যান এবং আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ১৩ হাজার নারী। সচেতনতা ও নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের অভাবে রোগ দেরিতে ধরা পড়ায় মৃত্যুর হার কমছে না। দেশের প্রায় ৫০০ সরকারি হাসপাতালে স্ক্রিনিং করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, নারীকে নিজ দেহ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং পরিবার ও সমাজের সমর্থন থাকতে হবে, যাতে স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ সম্ভব হয়।

প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে খুলনা বিভাগে শোভাযাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ফোরাম পরবর্তীতে নতুন তারিখ জানাবে।

উল্লেখ্য, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবী উদ্যোগে পরিচালিত এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় করে মানুষের মধ্যে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।