সরকারি ক্রয়ে বাজার দখল বাড়ছে

সর্বশেষ
ফজর | |
জোহর | |
আসর | |
মাগরিব | |
ইশা | |
সূর্যোদয় | |
সূর্যাস্ত |
বিএনপির ডাকে দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের অবরোধ চলছে। দলটি তাদের আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। দুই দিনের অবরোধের পর ৭ নভেম্বর বিএনপি সরকার বিরোধ কোনো কর্মসূচি রাখবে না। বিএনপি ওই দিনকে সিপাহী ও জনতার বিপ্লব দিবস হিসেবে পালন করবে।
তবে আবার বুধবার এবং বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিনের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ দেবে বলে একাধিক সূত্র বাংলা নিশ্চিত করেছে।
দুই দিনের অবরোধের পর শুক্র ও শনি দুই দিনের বিরতি থাকবে। বিএনপির কোনো কর্মসূচি পালন করবে না। আগামী রোববার থেকে বিএনপি কি ধরনের কর্মসূচি পালন করবে তা নিয়ে একাধিক মতামত পাওয়া গেছে।
বিএনপির একটি সূত্র বলছে, রোববার থেকে বিএনপির অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করতে পারে। এই অসহযোগ আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হল সরকারের সাথে সব বিষয়ে অসহযোগিতা করা এবং সরকারকে অস্বীকৃতি প্রদান করা হবে। তবে এ ধরনের কর্মসূচি এখনই ঘোষণা করবে নাকি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার পর শুরু করা হবে এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে ভিন্ন মত রয়েছে।
বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন যে রোববার থেকে অর্থাৎ ১২ নভেম্বর থেকে অসহযোগ আন্দোলন শুরু করাটাই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। এই অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে আস্তে আস্তে জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। আর অন্যদিকে বিএনপির কিছু নেতা মনে করছেন যে এখনই অসহযোগ আন্দোলন না দিয়ে বরং বিএনপিকে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখা উচিত। যখন নির্বাচন কমিশন তার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে ঠিক সেই সময় অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা উচিত বলে তারা মনে করছেন।
তবে অসহযোগ আন্দোলন করুক না করুক বিএনপি আন্দোলন বন্ধ করতে চায় না। বরং তারা টানা আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চায়। কিন্তু এই আন্দোলন ইতোমধ্যে অকার্যকর এবং অর্থহীন হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে গতকাল থেকে যে অবরোধের ডাক দিয়েছে সেই অবরোধ দিনের শুরু থেকেই অকার্যকর হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার তাগিদে বের হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে যানবাহন চলাচল কিছুটা কম হলেও দুপুর গড়াতে গড়াতেই যানবাহনের চলাচল বেড়ে গেছে। বিক্ষিপ্তভাবে কিছুভাবে ভাঙচুর আর রাত্রে গুপ্ত হামলার মতো কিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ছাড়া বিএনপির অসহযোগ আন্দোলনের আর কোনো ছাপ নেই। আর এধরনের গুপ্ত হামলা বা গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার ফলে জনমনে বিএনপির ওপর এক ধরনের বিরক্তি তৈরি হচ্ছে।
বিএনপি ক্রমশ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। তাই এই ধরনের কর্মসূচি কতটুকু কার্যকর হবে বা এ ধরনের কর্মসূচি করে বিএনপি আসলে কি অর্জন করতে চায় তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা এ ব্যাপারে অসহায়। বিএনপির অন্তত দুজন নেতা বলেছেন যে আমরা এ ধরনের কর্মসূচিতে যেতে রাজি নই। কিন্তু লন্ডনে পলাতক দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এই কর্মসূচির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য ইতোমধ্যে চাপ দিচ্ছেন। আর এই সমস্ত চাপের কারণে বিএনপিকে কর্মসূচি দিতে হচ্ছে। বিএনপির বিভিন্ন নেতা মনে করছেন এখন থেকে এ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হলে জানুয়ারিতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে নির্বাচন পর্যন্ত এই কর্মসূচি ধরে রাখা অসম্ভব ব্যাপার।
তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন যে এ ধরনের কর্মসূচি কিছুদিন থাকলেই সরকারের টনক নড়বে, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে। এবং তখন সরকার বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা বা সমঝোতার জন্য রাজি হতে পারে। এরকম একটি আশাবাদ থেকে বিএনপির কেউ কেউ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার পক্ষপাতি। তবে এ ধরনের কর্মসূচি শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে অস্তিত্বহীন করবে কিনা এই প্রশ্নটিই এখন ক্রমশ বড় হয়ে উঠেছে।
বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দ্বিতীয় দফার অবরোধের প্রথম দিনে দুই জায়গায় পেট্রোল বোমা হামলার খবর এসেছে। এরমধ্যে প্রথম হামলা হয়েছে রাজধানীর বনশ্রীতে। দ্বিতীয়টি হয়েছে সিলেটের পারাইরচক জলকরকান্দি এলাকায়। রাজনৈতিক আন্দোলন ঘিরে নতুন করে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
তারা বলছেন, ২০১৩-১৪-১৫ সালে সারা দেশে ব্যাপক পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এর শিকার হয়েছিল সাধারণ মানুষ। হরতাল কিংবা অবরোধ-যাইহোক, কর্মজীবি মানুষকে আতঙ্ক মাথায় নিয়ে ছুটতে হয় কর্মস্থলে। রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে নির্মমতার শিকার কেন সাধারণ মানুষ হবে?
এদিকে বিএনপি-জামায়াতের দ্বিতীয় দফা ডাকা অবরোধের প্রথমদিন রোববার ঢাকায় চার বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর বনশ্রীর মেরাদিয়া বাঁশপট্টি এলাকায় অছিম পরিবহন নামে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে রমজান পরিবহনের বাসের চালক দগ্ধ হন। বিকেলে রাজধানীর মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলামোটরে একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। রূপায়ন টাওয়ারের সামনে বাসটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা। এ ছাড়াও মিরপুরে শিকড় পরিবহনে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। সন্ধ্যা ৭টার দিকে পল্লবী এলাকায় সেতারা কনভেনশন সেন্টারের সামনে ওই বাসে আগুন দেওয়া হয়।
এর সকালে খিলগাঁও থানার বনশ্রী এলাকায় অছিম পরিবহন নামে একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মো. সবুজ (৩০) নামে এক গাড়িচালক দগ্ধ হন। তিনি রমজান পরিবহনের চালক ছিলেন। এছাড়া দুপুরে উত্তরা হাউজবিল্ডিং এলাকায় পুলিশের টহল গাড়িকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই ককটেল বিস্ফোরিত হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার এসআই মাহবুব আলীসহ তিন পুলিশ সদস্য আহত হন। এর বাইরে ঢাকাসহ দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে অবরোধ সমর্থনকারীদের বিক্ষোভ-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার রাতে রাজধানীর গুলিস্তানে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওইদিন সন্ধ্যায় রাজধানীর আরও তিনটি এলাকায় বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টার মধ্যে রাজধানীর নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড ও সায়েদাবাদ জনপথের মোড়ে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রোববার সকাল সাড়ে ৬টা রাজধানীসহ সারাদেশে ১২টি স্থানে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রাজধানীতে সাত জায়গায় আগুন লাগানো হয়েছে। ১০টি বাস, একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয় পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববার সকালে এসব তথ্য জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রোববার সকাল ৬টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত অবরোধের আগের রাতে ১২টি স্থান থেকে আগুনের সংবাদ পাওয়া গেছে। ঢাকা শহরে সাতটি, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর দুটি, সিরাজগঞ্জে একটি, বরিশালের চরফ্যাশনে একটি, রংপুরের পীরগঞ্জে একটি ঘটনা ঘটে। তিনি আরও জানান, ঢাকাসহ সারাদেশে ৯টি বাসে আগুন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাদলপুরে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে আগুন এবং একটি জায়গায় গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ারে আগুন দেওয়া হয়েছে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গত বছর থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করেছে রাজপথের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে গত ২৯ অক্টোবর হরতাল ও ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ পালনের মাধ্যমে সেই আন্দোলনের ধারায় ফিরেছে দলটি। দ্বিতীয় ধাপে রবিবার (৫ নভেম্বর) ও সোমবার (৬ নভেম্বর) সারা দেশে দলটি অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে।
বিএনপির প্রথম ধাপের অবরোধের সময় থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণসহ আগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের খবর পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে দেশের বিভিন্ন জায়গা পেট্রোল বোমা উদ্ধারের খবর দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই বোমাসহ অনেকে আটকও হয়েছেন।
বিএনপির অবরোধের দ্বিতীয় ধাপের প্রথম দিনেই দেশের দুই জায়গায় পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর বনশ্রীতে অছিম পরিবহনের একটি বাসে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। আগুন লাগা মাত্র চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খাদে ফেলে দেয় বাসটি। এতে বাসচালক সবুজ দগ্ধ হয়েছেন।
একইদিন সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পারাইরচক জলকরকান্দি এলাকায় একটি খাদ্যপণ্যবাহী পিকআপ ভ্যানে পেট্রোল বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এতে আগুন ধরে গাড়ির সামনের অংশ পুড়ে যায়। এ সময় পুলিশ এক পিকেটারকে আটক করে।
রাজধানীর যাত্রবাড়ি এলাকার বাসিন্দা রাসেল মাহমুদের কর্মস্থল কুড়িল বিশ্বরোড। নিয়মিত তাকে গণপরিবহনে যাতায়াত করতে হয়। রাসেল বলেন, বাসে উঠার সময়ই মনের মধ্যে একটা আতঙ্ক থাকে। তারপর তো কখন পৌঁছাব, ঠিকভাবে পৌঁছাতে পারব কি না, এসব চিন্তা তো থাকেই। যাত্রীদের নিরাপত্তায় বাসচালক ও সহকারীদের সতর্ক থাকতে দেখেছেন রাসেল। তিনি বলেন, তারা যাত্রীদের বাসের জানালা খোলা রাখতে দেন না। এখন তো বাসের জানালা দিয়েই আগুন দেওয়া হয়।
মিরপুর-১ নম্বর থেকে কারওয়ান বাজার এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করে কর্মস্থলে যোগ দেন গাজী কাইয়ুম। তিনি মনে করেন, বাসে আগুন দেওয়া বা পেট্রোল বোমা হামলা বন্ধ করার জন্য সাধারণ মানুষের সচেতনতা বেশি দরকার। মানুষ সচেতন থাকলেও এ ধরনের ঘটনা সহজে ঘটানো সম্ভব হবে না। তাছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনে নির্মমতার শিকার কেন সাধারণ মানুষ হবে , এমন প্রশ্নও রেখেছেন তিনি।
কায়ুইম বলেন, আমরা তো চাকরি করি ভাই। অফিস না গেলে তো বেতন কাটবে কর্তৃপক্ষ। সংসার চালানো তখন দায় হয়ে যাবে। বাসা থেকে না বের হয়ে কোনো উপায় নেই। আজ শুনলাম বাসের ভেতর নাকি পেট্রোল বোমা মারছে। সেই ৬-৭ বছর এরকমটা শুনতাম প্রতিদিন। আমার চেয়ে পরিবারের অন্য সদস্যরা বেশি চিন্তিত থাকে, ঠিকভাবে বাসায় ফিরতে পারব কি না।
এদিকে অবরোধের মধ্যে চট্টগ্রামে বিএনপির ডাকা হরতালের শুরুতে পতেঙ্গা এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রোববার ভোর পৌনে পাঁচটার দিকে পতেঙ্গা থানার কাটগড়ের গুমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।
পতেঙ্গা থানা পুলিশ জানিয়েছে, বাসটি পোশাক শ্রমিকদের বহন করার জন্য ওই এলাকায় অবস্থান করছিল।
দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের ডাকা দুইদিনের অবরোধে নগরীতে স্বাভাবিকের তুলনায় কম গণপরিবহন চলাচল করে। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে করে দেখা গেছে- রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা, টেম্পু, ভাড়ায় চালিত রাইড, মিনিবাস চলাচল করলেও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় সংখ্যা ছিল কম। অফিসগামী যাত্রীরদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে যেতে দেখা গেছে।
এদিকে বিএনপির এই অবরোধ ঘিরে রাজধানীতে ব্যাপক সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য লক্ষ্য করা গেছে। রোববার সকাল থেকে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অনেকটা ফাঁকা দেখা গেছে। এখনও কেন্দ্র তালাবদ্ধ। সেখানে দলবেঁধে পুলিশ অবস্থান করছে। এছাড়া ঢাকার প্রতিটি মোড়ে মোড়ে টহল দিতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে।
নয়াপল্টনে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় দুই ইউনিটে ভাগ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন পুলিশ সদস্যরা। সেখানে ব্যারিকেডও রাখা হয়েছে। সর্বাত্মক অবরোধে ঢাকা ও আশপাশের জেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। স্ট্যান্ডবাই রাখা হয়েছে আরও ১০ প্লাটুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশীদ মঙ্গলবার রাত ৯টায় এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, পুলিশ হত্যার মামলায় বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, গত ২৮ অক্টোবরে মহাসমাবেশের নামে সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় দায়ের করা বেশ কয়েটি মামলার আসামি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হচ্ছে। আগামীকাল তাদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
তিনি আরও জানান, বিএনপির এ দুই নেতাকেই শাহজাহানপুর থানার শহীদবাগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে সকালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
এদিন এ মামলার সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে আসামি মির্জা আব্বাস ও সাফাই সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত না হয়ে সময়ের আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন না মঞ্জুর করে মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করেন। একই সঙ্গে এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সংগতিবিহীন ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক মো. শফিউল আলম রাজধানীর রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
২০০৮ সালের ১৬ জুন আদালত এ মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলার বিচার চলাকালীন আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
রাজধানীর শহীদ বাগের ঢাকা ব্যাংক শাখা থেকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এর আগে সকাল থেকে তার শাহজাহানপুরের বাসা ঘিরে রেখেছিল পুলিশ।
সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ অক্টোবর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর মঞ্জুরুল ইমামের আদালতের তার জামিন বাতিল করে এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এদিন এ মামলার সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে আসামি মির্জা আব্বাস ও সাফাই সাক্ষীরা আদালতে উপস্থিত না হয়ে সময়ের আবেদন করেন। আদালত সময়ের আবেদন না মঞ্জুর করে মির্জা আব্বাসের জামিন বাতিল করেন। একই সঙ্গে এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আগামী ২ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।
মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে আয়ের সঙ্গে সংগতিবিহীন ৭ কোটি ৫৪ লাখ ৩২ হাজার ২৯০ টাকার সম্পদ অর্জন এবং ৫৭ লাখ ২৬ হাজার ৫৭১ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক মো. শফিউল আলম রাজধানীর রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন।
তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৪ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক মো. খায়রুল হুদা আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে তার বিরুদ্ধে ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকার সম্পদ অর্জন ও ২২ লাখ টাকার সম্পত্তির তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়।
২০০৮ সালের ১৬ জুন আদালত এ মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন। এ মামলার বিচার চলাকালীন আদালত ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে চলমান সংকটের সমাধান খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একাধিক সদস্য। এজন্য তারা সংলাপেরও আহ্বান জানান। মঙ্গলবার সংসদের বৈঠকে একটি বিলের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
সংসদের বৈঠকে ‘জেলা (পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলাসমূহে বলবৎকরণ) বিল’ পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে জাপার সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংলাপ ডাকার আহ্বান জানান। যদিও এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদে উপস্থিত ছিলেন না। একই সময়ে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছিলেন।
শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, এখনই সময় বঙ্গবন্ধু কন্যার একটি হাই টাইম ডায়ালগ ডাকার, শান্তি প্রতিষ্ঠা করার এবং একটা সুষ্ঠু সমাধানের দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়ার। ভোট সামনে রেখে অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সামনেও হবে। গার্মেন্টসে আন্দোলন হচ্ছে। বিএনপিও আন্দোলন করছে, সেখানেও মারামারি হচ্ছে। সংঘাত দৃশ্যমান হচ্ছে।
জাপার এই সদস্য বলেন, এ মুহূর্তে আজকে সংঘাত আছে, জনমনে আতঙ্ক আছে। যেহেতু ড্রাইভিং হুইলে আছে সরকার, যেহেতু সরকার ক্ষমতায় আছে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা, সমাধানের ক্ষমতা সরকারের হাতে, সরকারের এ বিষয়ে ডায়ালগ ডাকা উচিত। আলোচনা করা উচিত।
রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে নেমেছে উল্লেখ করে শামীম হায়দার বলেন, বহির্বিশ্বের সাথে যদি আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়, একতরফা ইলেকশন হলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক খারাপ হলে আমাদের এলসি কম আসবে, এটা আরও কমবে, একটা সময়ে জিরো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে আগামী ২–৩ বছর পর।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র সরকার তো এক দিনের জন্য না। একটা ভোটের জন্য না, দীর্ঘদিনের জন্য।
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য হাফিজ উদ্দীন আহমদ বলেন, আজ গোটা দেশ অশান্ত। অবরোধে বিভিন্ন জায়গায় মারামারি হচ্ছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগের যে পরিস্থিতি দেশ সেদিকে যাচ্ছে। এর সুষ্ঠু সমাধান জরুরি। গার্মেন্ট শ্রমিকেরা রাস্তায় নেমেছে।
হাফিজ উদ্দীন বলেন, নির্বাচন কমিশন বলছে যথাসময়ে নির্বাচন। কীভাবে হবে? ২০১৪ সালের মতো? এর কী জবাব? তিনি বলেন, শান্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন, নির্বাচনের পরিবেশ ফিরিয়ে আনুন, শ্রমিকদের দাবি দাওয়া মেনে নিন।
পোশাক শ্রমিকদের নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে। ডিসেম্বর থেকে এই মজুরি কাঠামো কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
মঙ্গলবার বিজিএমইএ প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফারুক হাসান এ তথ্য জানান।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, শ্রমিকদের কষ্ট হচ্ছে আমরা জানি। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতি এখন সংকটে আছে। আমাদের পোশাক রপ্তানি কমে গেছে। এ অবস্থায় আমরাও খুব একটা ভালো নেই।
ফারুক হাসান বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি একটি কঠিন সময় পার করছে। এর চেয়ে কঠিন অবস্থায় আছে দেশের পোশাক শিল্প। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি কমেছে বিশ্বব্যাপী ২৬ দশমিক ৮০ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ থেকে তাদের আমদানি কমেছে ২৯ দশমিক ১০ শতাংশ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো আমদানি কমিয়েছে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কমেছে ১৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। বিশ্বব্যাপী আমদানি কমেছে ১৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং বাংলাদেশের কমেছে ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ।
সার্বিকভাবে দেশের পোশাক রপ্তানি ২২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, পোশাক শিল্প মালিকরা যদি মনে করেন তাদের শ্রমিকদের নিরাপত্তা, কারখানার নিরাপত্তা এবং সম্পদ রক্ষায় শ্রম আইনের ১৩/১ ধারায় কারখানা বিনা নোটিশে বন্ধ করতে পারবে, এর জন্য কোনো বেতন দিতে হবে না মালিকদের। এছাড়া আসছে নভেম্বর মাসে যে ঘোষণা মজুরি বোর্ড দেবে তা বিজিএমইএ মেনে নিয়ে ডিসেম্বরেই বেতন দেয়া হবে।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, দেশের পোশাক শিল্প এখন খুব ভালো অবস্থানে যাওয়ার চেষ্টায় এবং রাস্তায় আছে। কিন্তু এমন সময়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন তা অনভিপ্রেত। এই সময়ে দেশের মূল্যস্ফীতির চাপে পুরো দেশ এবং অর্থনীতি বিপর্যস্ত। এখন আন্দোলনের কারণে পোশাক কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিক ভাইয়েরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন, যা আমরা চাই না।
বক্তব্যের শুরুতে মৃত শ্রমিকদের প্রতি মাগফিরাত এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান বিজিএমইএ সভাপতি। পাশাপাশি পোশাক মালিকদের ক্ষতিতে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে ভারতের দিল্লীতে চার দিনব্যাপী আয়োজিত ডব্লিউএইচওর ৭৬তম দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে এ স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হাতে এই স্বীকৃতির সনদপত্র তুলে দেন ডব্লিউএইচও’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পুনম খেত্রপাল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে সনদ পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এর আগে বাংলাদেশ ফাইলেরিয়া ও পোলিও নির্মূল করে সনদ পেয়েছিল। এবার কালাজ্বর নির্মূলে বিশ্বে প্রথম হওয়ায় এটি একটি জাতিগতও প্রশংসিত অর্জন হয়েছে। এ অর্জনে দেশের স্বাস্থ্যখাতসহ আমরা সবাই গর্বিত। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই অর্জনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ পরামর্শ ও নির্দেশনার কথা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি তিনি ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালকের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান।
জাহিদ মালেক বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক এখন ভরসার জায়গা হতে পেরেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য শেখ হাসিনার বিশেষ অবদান দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রায় ৬ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে। ধীরে ধীরে দেশের দুর্গম এলাকাতেও প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক। তিনি বলেন, ক্লিনিকগুলো থেকে বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি গ্রামের মায়েদের নিরাপদে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রেও কমিউনিটি ক্লিনিক কাজে লাগছে। এর সুফল হিসেবে গত কয়েক বছরের জরিপে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ৩২০ জন থেকে হ্রাস পেয়ে এখন ১৬৩ জনে নেমেছে। একইভাবে প্রতি হাজার জীবিত শিশুর মৃত্যুহার ৬৫ জন থেকে হ্রাস পেয়ে ২৮ জনে নেমে এসেছে।
সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে সম্প্রতি জাতিসংঘ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক ধারণা স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া মন্ত্রী বাংলাদেশের মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস, শিশুমৃত্যু হার হ্রাস করা, গড় আয়ু বৃদ্ধি ও করোনা প্রতিরোধী টিকাদানে বাংলাদেশের ৯৮ ভাগ সফলতার বিষয়টি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি করোনাকালে ১৫ হাজার চিকিৎসক ও ২৫ হাজার নার্সসহ প্রায় দেড় লাখ জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সম্মেলনে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, পূর্ব-তিমুর ও উত্তর কোরিয়াসহ ১১টি দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শাহাদত খন্দকার, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।
টানা ৭২ ঘণ্টার বিরোধী দলগুলোর ডাকা সর্বাত্মক অবরোধ শুরু হয়েছে। অবরোধের সর্মথনে সারাদেশে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের গুলিতে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ছাত্রদল নেতা রেফায়েত উল্লাহ ও কৃষকদল নেতা বিল্লাল মিয়া নিহত হয়। সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার যুবদল নেতা দিলু আহমেদ জিলুকে গাড়ী চাপা দিয়ে হত্যা করা হয় বলে জানায় বিএনপি। সারাদেশে অসংখ্য নেতাকর্মী আহত ও গ্রেপ্তার হয়েছে।
অবরোধে শুরু থেকেই মাঠে ছিলো বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছেসেবক দল, কৃষকদল, শ্রমিক দল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সারাদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও রেল পথে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে। পিকেটিং করে। বিভিন্ন জায়গা গাড়ি ভাংচুর ও গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে উন্মত্ত হায়েনার মতো হামলা চালিয়েছে পুলিশ। অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ যে তান্ডবলীলা চালাচ্ছে, এটি কোনো সংঘর্ষ নয়, সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন। লক্ষ-লক্ষ গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে মুষ্টিমেয় কিছু অস্ত্রধারীর এই মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশে-বিদেশে ধিকৃত।
তিনি বলেন, বিএনপির নিরস্ত্র নেতা-কর্মীদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ চালাচ্ছে পুলিশ-র্যাব-বিজিবির একটি উচ্ছিষ্টভোগী অংশ। আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্রের মতো নির্বিচারে ও বেপরোয়াভাবে ব্যবহার করছে বুলেটের গুলি, টিয়ার শেল, লাঠি চার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, আর্মড ভেহিকল ও অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। সশস্ত্র আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গণবিরোধী আক্রমণে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। আওয়ামী লীগের এই দুষ্কৃতিকারীরা আঘাত করছে স্টিলের পাইপ, লাঠিসোটা, বাঁশ, স্ট্যাম্প, হকিস্টিক, কাঠ ও চাপাতি দিয়ে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, যৌথভাবে আওয়ামী লীগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী চালিয়ে যাচ্ছে আগুন সন্ত্রাস, পুড়াচ্ছে একের পর এক যানবাহন ও স্থাপনা। তাদের লক্ষ্য সবার কাছে পরিষ্কার, নিজেরা নানা দেশবিরোধী অঘটন ঘটিয়ে তার বেনিফিশিয়ারি হিসেবে বিএনপির সকল নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার প্রহসনমূলক গ্রেপ্তার ও রায় নিশ্চিত করা।
দেশে চলমান বিচারহীনতা, অপশাসন, সীমাহীন দুর্নীতি, অনাচার, অর্থ পাচার ও সিন্ডিকেটবাজীর ফলে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে বিপর্যস্ত জনগণের জীবন জীবিকা রক্ষার স্বার্থে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষে আয়োজিত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতা-কর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষে আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে নভেম্বর দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি।
বিএনপির পাশাপাশি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল ও জোট অবরোধ কর্মসূচি পালন ও সমর্থন করেছে।
খুনিদের সঙ্গে কিসের সংলাপ, সে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, সময়মতোই নির্বাচন হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল, তা নিয়ে পরোয়া করেন না। ব্রাসেলসে ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম’ সম্মেলনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা জানাতে মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে প্রশ্নোত্তরে এ কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত শর্তহীনভাবে সংলাপের আশা প্রকাশ করেছেন। আপনি এটাকে কীভাবে দেখছেন?
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কার সঙ্গে সংলাপ? বিরোধী দলটা কে? বিরোধী দল হচ্ছে, যাদের সংসদে আসন আছে। এর বাইরেরগুলো আমেরিকায়ও বিরোধী দল হিসেবে দেখে না। ট্রাম্পকে তারা কী বলবে? তারা তো তাদের বিরোধী দল। যদিও আমরা তাদের পদ্ধতিতে না।’ এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এই যে মানুষগুলো হত্যা করা হলো, তখন তাঁকে (পিটার হাস) প্রশ্ন করা হলো না কেন? যখন একটা উপনির্বাচনে হিরো আলমকে কেউ মেরেছে, তখন তাঁরা বিচার দাবি করেছে। এখন যখন পুলিশ হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল তখন বিচার দাবি করল না কেন?’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যেভাবে পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করেছে, এরপর খুনিদের সঙ্গে কিসের বৈঠক? কিসের আলোচনা? যারা এভাবে মানুষকে হত্যা করতে পারে, যারা উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ধ্বংস করতে পারে, তাদের সঙ্গে ডায়ালগ? সে বসে ডিনার খাক, সে বসে ডায়ালগ করুক। এটা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। খুনিদের সঙ্গে ডায়ালগ তার দেশের মানুষও চাইবে না। বিএনপি-জামায়াতকে মানুষ ঘৃণা করে। তাদের দুর্নীতির জন্য কানাডা থেকে লোক এসে সাক্ষ্য দিচ্ছে।’
২৮ অক্টোবরের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এখন তারা চুপ কেন? অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো এখন চুপ কেন? তাদের মানবিক বোধগুলো গেল কোথায়?’ দেশের বুদ্ধিজীবীরা চুপ কেন, সে প্রশ্নও তোলেন প্রধানমন্ত্রী। আরেক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, কোন বিদেশি শক্তি আমাদের রাজনীতিতে চোখ রাঙাচ্ছে? নির্বাচন নিয়ে নানাজন নানা মন্তব্য করছেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন হবে এবং সময়মতোই হবে। কে চোখ রাঙাল আর কে চোখ বাঁকাল, ওটা নিয়ে পরোয়া করি না।’ দেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু ঢাকার উন্নয়ন নয়, গ্রামেও অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ওই সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবেও সংলাপ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যারা খুন করার পরও বলে, ডায়ালগ করতে হবে। কার সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে? ট্রাম্প সাহেবের সঙ্গে কি বাইডেন ডায়ালগ করতেছে? যেদিন ট্রাম্পের সঙ্গে বাইডেন ডায়ালগ করবেন, সেদিন আমি করব।’
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ আয়োজন করে। এ কর্মসূচি উপলক্ষে সারা দেশ থেকে দলটির নেতা–কর্মীরা নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় সমবেত হন। তবে ওই দিন বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের এক সদস্য এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠন যুবদলের এক নেতা নিহত হন। সংঘর্ষের কারণে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হয়ে যায়। পরদিন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশের গ্রপ্তার অভিযানের মুখে আত্মগোপনে গেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা। এর মধ্যেই আজ থেকে সারা দেশে বিএনপির সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে গিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। বৈঠক শেষ তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গণতান্ত্রিক নির্বাচনে কোনো পক্ষের সংঘাতের জায়গা নেই। তিনি আশা করেন, বাংলাদেশে উদ্বেগ প্রশমন এবং একটি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পথ খুঁজতে সব পক্ষ শর্তহীন সংলাপে বসবে। তাঁর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসি কার্যালয়ের সচিব জাহাঙ্গীর আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ৪ নভেম্বর ৪৪টি দলের সঙ্গে কমিশন বসবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোকে জানাতে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে।
ইসি সচিব বলেন, সংলাপের জন্য দলগুলোর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা তাদের নির্ধারণ করা দুই প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানাবে নির্বাচন কমিশন। নিবন্ধিত সবগুলো দলকে দুই ভাগে সংলাপের জন্য ডাকা হবে।
নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বিএনপি চাইছে, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এই ইস্যুতে বিএনপির চলমান আন্দোলনের মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সংলাপে বসার উদ্যোগের কথা জানাল ইসি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের সাংগঠনিক সক্ষমতা ও জনমত পক্ষে টানতে কয়েক মাস ধরে সারা দেশে সমাবেশ ও পাল্টা-সমাবেশের কর্মসূচি দিচ্ছে।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হতে হবে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৯ জানুয়ারি। হিসাব অনুযায়ী, ৯০ দিনের গণনা শুরু হবে ১ নভেম্বর থেকে।
নির্বাচন কমিশন নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তফসিল ঘোষণা ও জানুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে। এর আগে গত বছরের জুলাইয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে ইসি। তবে বিএনপি ও আটটি বিরোধী দল ওই সংলাপে অংশ নেয়নি। তারা বলছে, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়।
চলতি বছরের মার্চে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বিএনপিকে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আধা সরকারি চিঠি দিয়েছিলেন। তবে বিএনপি ওই আমন্ত্রণে সাড়া দেয়নি।
ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা মিয়ান আরেফীর বিরুদ্ধে পল্টন থানায় করা মামলায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাসান সারওয়ার্দীকে সাভারের একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে এই গ্রেপ্তার অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবির এক কর্মকর্তা কালবেলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২৯ অক্টোবর) রাতে মহিউদ্দিন শিকদার নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পল্টন থানার ওসি মো. সালাহউদ্দীন মিয়া।
আসামিদের বিরুদ্ধে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ এনেছেন বাদী।
এজাহারে বলা হয়েছে, শনিবার পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সারা দেশ থেকে দলটির নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। ওইদিন বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কাকরাইল মোড় থেকে আরামবাগ মোড় পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। তারা প্রধান বিচারপতির সরকারি বাসভবনসহ সরকারি স্থাপনা এবং সরকারি গাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। এতে পুলিশের ৪১ সদস্য আহত ও এক সদস্য নিহত হন। একপর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা মহাসমাবেশ স্থগিত ঘোষণা করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, বিএনপির ওই কর্মকাণ্ডের পর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বে ২০ জন নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে কিছু সংবাদমাধ্যমের সামনে মিয়ান আরেফী নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেন। পুলিশ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তার সরকারের কাছে সুপারিশ করেছেন বলে বক্তব্য দেন তিনি।
সেখানে মিয়ান আরেফী বক্তব্যে দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দিনে ১০ থেকে ১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, হাসান সারওয়ার্দী এবং ইশরাক হোসেন তাকে মিথ্যা বক্তব্য দিতে সহযোগিতা করেন এবং তার বক্তব্য সমর্থন করে বিএনপি নেতাকর্মীদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতিতে উসকানি দেন। মিয়ান আরেফী তাদের সহায়তায় সরকারের প্রতি বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন।
এজাহারে বলা হয়, ওই সংবাদ সম্মেলনে একপর্যায়ে মিয়ান আরেফীর বক্তব্য শুনে এবং ভিডিও দেখে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে।
বাদী অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোবল বাড়াতে আসামিরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করতে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করেছেন।
আমেরিকার পাসপোর্টধারী মিয়ান আরেফীর প্রকৃত নাম মিয়া জাহিদুল ইসলাম আরেফী। তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। শনিবার বিএনপির কার্যালয়ে মিথ্যা পরিচয়ে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার পর রোববার বিকেলে তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন। তবে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে ডিবি পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরই মধ্যে তিনি ডিবির কাছে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বিএনপির তিন দিনের অবরোধের প্রথম দিন রাজধানীতে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ১৫৮ জনকে গ্রেপ্তার, পুলিশের ওপর হামলা, দুই বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তবে সপ্তাহের অন্যান্য কর্মদিবসের মতো যানজট চোখে পড়েনি। আর নিরাপত্তা নিশ্চিতে রাজধানীতে সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্যে ছিল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে মোতায়েন থাকবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিজিবি প্লাটুন। দেশের বিভিন্ন স্থানে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে দেয়া হচ্ছে বিজিবি'র টহল।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশব্যাপী রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে দলটি। একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বোরাক পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। তবে এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।
কদমতলী থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা বলেন, দুর্বৃত্তরা বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে গেছে। তাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হচ্ছে।
এছাড়া বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় ঈদগাহ ও হাইকোর্টের সামনের সড়কে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসটি কদম ফোয়ারার সামনে পৌঁছালে যাত্রীদের নামিয়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্তব্যরত কর্মকর্তা এরশাদ হোসেন জানান, হাইকোর্টের সামনে বাসে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে সেখানে যায় ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট। কিছুক্ষণের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা।
এছাড়া দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর চকবাজারের চানখারপুল মোড়ে অবরোধকারীদের হামলায় তিন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন।
আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন, চকবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম, পরিদর্শক (অপারেশন্স) জাকির হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) শুভঙ্কর রায়।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম জানান, দুপুর আড়াইটার দিকে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি মিছিল বের করেন। এ সময় অনুমতি না থাকায় মিছিলে বাধা দেয়া হয়। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে মিছিলে থাকা নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমরা আহত হই। পরে আহত তিন পুলিশ সদস্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর আগে সকালে রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি এলাকায় একটি পুলিশ বক্স লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এ ঘটনায় এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে মোটরসাইকেলে এসে পুলিশ বক্সে ককটেল নিক্ষেপ করেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
অপরদিকে দুপুরে রাজধানীর পল্টন এলাকার বিজয়নগরে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের দাবি, অবরোধের সমর্থনকারী বিএনপির নেতাকর্মীরা এই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
এ বিষয়ে পল্টন থানার ওসি সালাউদ্দিন জানান, দুপুর সোয়া ১টার দিকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকে অবরোধের সমর্থনে বিএনপির নেতাকর্মীদের একটি মিছিল বের হয়। মিছিল থেকে বিজয় নগরে একটি ককটেল বিস্ফোরণ করে তারা। এসময় তারা একটি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ গিয়ে প্রাইভেটকারটি ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা করে।
এর আগে সকাল থেকে পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় বিক্ষিপ্ত ঝটিকা মিছিল করে বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এসময় গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীদের পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। তবে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানা গেছে।
এছাড়া নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সতর্ক অবস্থায় পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। ওই এলাকায় সকাল থেকে অবরোধের সমর্থনে কাউকে মিছিল করতে দেখা যায়নি।
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে চায় বিএনপি। মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করতে চায় জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। রাজধানীতে এসব সভা-মহাসমাবেশকে ঘিরে প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ, র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন শাখা।
রাজনৈতিক দলগুলোর এই মহাআয়োজনকে ঘিরে বারবার সতর্ক করছে পুলিশ ও র্যাব। বিএনপিকে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের অনুমতি দিতে চায় নি ঢাকা মহানগরী পুলিশ (ডিএমপি)। বিএনপিকে মহাসমাবেশের জন্য অন্য জায়গা বিবেচনার কথা বললেও জামায়াতের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে পছন্দমতো স্থানে একই শর্তে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান আজ রাতে বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মতো বড় দুইটি দল তাদের কর্মূসচি কীভাবে, কখন, কোথায় করতে চায়- তা পুলিশকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পুলিশের কাছে দেওয়া দুই দলের চিঠি ইতিবাচকভাবে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হচ্ছে।
কমিশনার বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করার অনুমতি দিতে সমস্যা নেই। তবে এখনও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত হয়নি। তা হলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে জলকামান, সাঁজোয়া যান, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে সর্বাত্মক প্রস্তুত থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা রেঞ্জের আওতায় থাকা বিভিন্ন থানায় রাখা হবে রিজার্ভ ফোর্স। সূত্র জানায়, বিজিবিকে রাখা হচ্ছে স্টানবাই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে মাঠে নামবে তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, কোনো সহিংসতার শঙ্কা দেখছি না। তবে জামায়াতকে কোনোভাবেই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
বিশৃঙ্খলা রোধে যে ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ মহিদ উদ্দিন।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ঢাকার প্রবেশপথসহ রাজধানীর ভেতরে সড়কও গলিতে টহল দিচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যরা।
সূত্র জানায়, রাজধানীর প্রবেশপথগুলোসহ মহাসমাবেশ ঘিরে মোতায়েন করা হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০-১৫ হাজার সদস্য। এ ছাড়া মহাসমাবেশের দিন জলকামান, সাঁজোয়া যান, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যখনই নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা দেবে, তখনই শক্তি প্রয়োগ করা হবে।
ডিএমপির একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াতের মহাসমাবেশের দিন ঢাকার প্রবেশপথ সাইনবোর্ড, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, পোস্তগোলা সেতু, বাবুবাজার সেতুসহ রাজধানীর পয়েন্টগুলোতে প্রায় ১৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডিএমপির দাঙ্গা দমন বিভাগ, থানা-পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মূল দায়িত্বে থাকবে। বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণের জন্য প্রস্তুত থাকবে ডিএমপির বিশেষায়িত দল সোয়াটের সদস্যরা।
এদিকে রাজধানী ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে টহল দিচ্ছে পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা। চেক করা হচ্ছে সন্দেহভাজন নাগরিক ও ব্যক্তিগত গাড়ি। চেক করা হচ্ছে রোগীবাহী এম্বুলেন্সও।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আমিনবাজার ও আশুলিয়ায় পুলিশের চেকপোস্টের কার্যক্রম শুরু হয়। পাশাপাশি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আরেকটি চেকপোস্ট পরিচালনা করছেন র্যাব-৪ এর সদস্যরা। ইতোমধ্যে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে কেরানীগঞ্জ, সাইনবোর্ড ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায়। সন্ধ্যার পর থেকে মতিঝিল, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় সিএনজি, রিকশা থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ১৬৬ এবং বিএনপি সর্বোচ্চ ১৩৭টি আসন পেতে পারে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত।
আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি আয়োজিত এক সেমিনারে একটি গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ তথ্য প্রকাশ করেন ড. আবুল বারকাত।
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের প্রতিটি নির্বাচন বিশ্লেষণ করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। একইসঙ্গে কথা বলেছেন ভোটারদের সঙ্গেও। এসবের আলোকে তিনি একা পরিচালনা করেছেন 'ভোটারের মন ও আসন্ন ২০২৪ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল' শীর্ষক গবেষণা।
দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে ড. আবুল বারকাত জানান, গত প্রায় ছয় মাস যাবৎ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে এবং পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলো বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা সম্পন্ন করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, 'আমার এই গবেষণার সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই। অনেকে ভাবতে পারেন, সামনে দেশে যা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার সঙ্গে হয়তো এই গবেষণা ফলাফল প্রকাশের সম্পর্ক আছে। তাদের নিশ্চিত করতে চাই, বিষয়টি এমন নয়। একেবারে ব্যক্তি আগ্রহ থেকে ছয় মাস আগে আমি এই গবেষণা শুরু করেছিলাম।'
গবেষণার প্রতিবেদন প্রকাশ করে ড. বারকাত বলেন, 'আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দল, প্রার্থী ও ভোটারের জন্য নির্বাচনী মাঠ সমান হলে ৩০০ আসনের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৪৮ থেকে ১৬৬টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ১১৯ থেকে ১৩৭টি এবং অন্যান্য দল ১৫টি আসন পেতে পারে।'
তিনি বলেন, 'দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি আসনের ভাগ্য মোটামুটি নির্ধারিত। এগুলো দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত্তি আসন। এই ১৫৫টি ভিত্তি আসনের মধ্যে ৭০টি পেতে পারে আওয়ামী লীগ, ৭০টি বিএনপি এবং বাকি ১৫টি জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি ও বিজেপি পেতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'তবে বড় দুই দলের মধ্যে যেকোনো দলকে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বাকি ৮১টি আসন পেতে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ভোটের ওপর নির্ভর করতে হবে এবং যেকোনো আসনে জিততে হলে দোদুল্যমান ভোটারদের ৫৬ শতাংশ ভোট পেতে হবে।'
গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৫৫টি ভিত্তি আসনের বাইরে থাকা ১৪৫টি আসনই নির্ধারণ করবে যে কোন দল সরকার গঠন করবে। ভিত্তি আসনে দোদুল্যমান ভোটারদের ভূমিকা থাকবে কম। তবে, বাকি ১৪৫টি আসনে ভাগ্য নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা থাকবে দোদুল্যমান ভোটারদের।
ড. বারকাত দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এই ১৪৫টি আসনের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও বয়সের ভোটারদের সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা করে তিনি দোদুল্যমান ভোটারদের চিন্তা বোঝার চেষ্টা করেছেন।
সেই আলোকে তার গবেষণায় উঠে এসেছে, এই ১৪৫টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৭৮ থেকে ৯৬টি আসন এবং বিএনপি ৪৯ থেকে ৬৭টি আসন পেতে পারে।
আসন্ন নির্বাচনে দেশের দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর ভোটারদের মাঝে পদ্মা সেতু একটি বড় নিয়ামক হতে পারে উল্লেখ করে তিনি জানান, এই অঞ্চলের ২৩টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের সবগুলো আওয়ামী লীগ পেতে পারে।
এ ছাড়া, ঢাকাসহ দেশের পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর অঞ্চলের ১২২টি বিজয় অনিশ্চিত আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৫৫ থেকে ৭৩টি এবং বিএনপি ৪৯ থেকে ৬৭টি আসন পেতে পারে বলে উঠে এসেছে এই গবেষণায়।
ড. বারকাত দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই গবেষণার জন্য এ যাবৎ হওয়া সবগুলো নির্বাচনের প্রার্থীদের তালিকা আমি বিশ্লেষণ করেছি। এই সংখ্যা ১৬ হাজারের বেশি। নির্বাচনে প্রত্যেক প্রার্থী কত ভোট পেয়েছেন সেটা বের করেছি।'
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন প্রার্থী কত সৎ তার কোনো সম্পর্ক নেই। ভোটাররা চিন্তা করেন কোনো বিপদে পড়লে কার কাছে গিয়ে সহযোগিতা পেতে পারেন, তাকেই তারা ভোট দিতে চান।'
তার ভাষ্য, 'দোদুল্যমান ভোটাররা ভোট দেওয়ার সময় অর্থপাচার থেকে শুরু করে এত বড় বড় বিষয় নিয়ে ভাবেন না। তাদের কাছে গুরুত্ব পায় দ্রব্যমূল্য, মানব নিরাপত্তা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের মতো বিষয়। এবার এর সঙ্গে পদ্মা সেতু, ২০১৮ সালের নির্বাচন এবং স্যাংশন‑নিষেধাজ্ঞা‑ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের যুদ্ধ একটি অবজেক্টিভ ফ্যাক্টর ও সংশ্লিষ্ট কাউন্টার‑ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।'
'একই সঙ্গে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে আত্মীয়তা, বন্ধুবান্ধব, ঘনিষ্ঠজন, মুরুব্বিদের উপদেশ‑আদেশ‑নির্দেশ এবং নারীদের ক্ষেত্রে পিতৃতান্ত্রিকতা সাবজেক্টিভ ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে,' যোগ করেন তিনি।
অধ্যাপক আবুল বারকাত জানান, ভোটারের সম্ভাব্য দলীয় আনুগত্য অবস্থা, ভিত্তি ভোট বা দলীয় অনুগত ভোটারের ভোটের ধারণা, ভিত্তি আসনের ধারণা, বিজয় অনিশ্চিত আসনের ধারণা, দোদুল্যমান ভোট, দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদান সিদ্ধান্ত গ্রহণের পেছনের ফ্যাক্টর-কাউন্টার ফ্যাক্টর এবং এসবের সম্ভাব্য প্রভাব ও গতিমুখ, ভোটারদের ভৌগলিক অবস্থান বিভাজন (পদ্মা সেতুর প্রভাব অঞ্চল এবং তার বাইরের অঞ্চল) ব্যাখ্যা‑বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে দীর্ঘ খোলামেলা আলাপ‑আলোচনার ভিত্তিতে এই গবেষণা করা হয়েছে।
ড. বারকাত বলেন, 'এই সম্ভাব্য ফলাফল সঠিক হলে আওয়ামী লীগের জোটবদ্ধভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে জোট হতে পারে জাতীয় পার্টির সঙ্গে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষে এককভাবেও সরকার গঠন সম্ভব হতে পারে, যদি তারা সর্বোচ্চ সংখ্যক সম্ভাব্য আসন পায়।'
তিনি বলেন, 'সম্ভাব্য চূড়ান্ত ফলাফল বহাল থাকলে বিএনপির পক্ষে এককভাবে সরকার গঠনের সম্ভাবনা নেই। তবে বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের সম্ভাবনা যতটুকু আছে, তা যথেষ্ট শর্তসাপেক্ষ। এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে অবশ্যই সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন নিশ্চিত করতে হবে এবং জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ বাকি সব দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতে হবে। একইসঙ্গে এই সমীকরণের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের আসন সংখ্যা কোনো অবস্থাতেই সম্ভাব্য সর্বনিম্ন সংখ্যক আসনের বেশি হতে পারবে না। এত বেশি শর্তসাপেক্ষ বিধায় বিএনপির পক্ষে জোটবদ্ধ সরকার গঠনের বাস্তব সম্ভাবনা ক্ষীণ।'
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আরও বলেন, 'সম্ভাব্য এই হিসাব কতটা সঠিক বা ভুল তা বুঝতে তিনটি বড় মাপের চলকের—ভিত্তি ভোট, ভিত্তি আসন ও দোদুল্যমান ভোটারদের ভোট প্রদান সিদ্ধান্তের সম্ভাব্য কাঠামো—সম্ভাব্য মান যৌক্তিকভাবে পরিবর্তন করে দেখা গেছে যে, তাতে করে দলভিত্তিক আসন বণ্টনে এমন কোনো হেরফের হয় না, যাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হতে পারে। সুতরাং, আসন্ন ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের সম্ভাব্য আসনসংখ্যার যে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে, তা যথেষ্ট মাত্রায় সঠিক এবং সম্ভাব্য নির্বাচনী ফলাফল সংশ্লিষ্ট গৃহীত পদ্ধতিতত্ত্ব যথেষ্ট বিজ্ঞানসম্মত।'
দেশের রাজনীতিতে যেন আতঙ্কের দিন হয়ে উঠেছে ২৮ অক্টোবর। ১৭ বছর আগে এই দিনে ঢাকায় বড় দলগুলোর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আবারও আলোচনায় এসেছে ২৮ অক্টোবর। কারণ ওইদিন বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। একইদিন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগও কর্মসূচি দিয়ে ঢাকা দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে রাজনীতিতে দীর্ঘসময় ধরে কোনঠাসা হয়ে থাকা জামায়াতও সেদিন বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোও মাঠে থাকবে। আর সব দলই নিজেদের ঘোষিত স্থানে সমাবেশ করতে অনড় অবস্থানে রয়েছে। পুলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে নয়াপল্টনে বিএনপি, বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগ এবং মতিঝিলের শাপলা চত্তরে জামায়াতে ইসলামী সমাবেশ করার চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছে। একইদিন ঢাকা শহরে সব দলের কর্মসূচি দেওয়ায় দিনটিকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। কী হবে সেদিন তা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কাজ করছে নগরবাসীর মধ্যে। সেদিন বড় ধরণের সংঘাতের আশঙ্কা করছে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও। তবে দিনটিতে যেন বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় সেজন্য ঢাকায় নিরাপত্তা বলয় তৈরির নানা ছক কষছে বিভিন্ন বাহিনী। যদিও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পরামর্শ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের যখন বাংলাদেশের কড়া নজর তখন সংঘাত এড়ানো সম্ভব না হলে তা বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপি ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জামায়াত সমাবেশের ডাক দিয়েছে। অন্যদিকে ওইদিন বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে কর্মসূচি পালন করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়াও পুরো ঢাকায় ছড়িয়ে থাকবেন তাদের নেতাকর্মীরা। এরইমধ্যে বিএনপি বলেছে স্মরণকালের সেরা উপস্থিতির মধ্য দিয়ে মহাসমাবেশ করতে চায় তারা। তবে নয়াপল্টনে দলটি অনুমতি পাবে কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। অন্য কোথাও পাঠাতে চাইলেও বিএনপি যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে ঢাকায় দশ লাখ নেতাকর্মীকে কর্মসূচিতে উপস্থিত করার কথা বলছে আওয়ামী লীগ। আর একইদিনে সমাবেশের অনুমতি না পেলেও মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। এদিন বিএনপির সঙ্গে যুগপথ আন্দোলনে থাকা ৩৬টির মতো দলও মাঠে থাকবে।সার্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে দফায় দফায় বৈঠক করণীয় নির্ধারণ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও। আপাতত ছুটিও বাতিল করা হয়েছে সদস্যদের।
জানা গেছে, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে বিএনপি, ঢাকা মহানগর ও দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা। এছাড়া দেশের সব সাংগঠনিক বিভাগ, মহানগর ও জেলা ও উপজেলার পর্যায়েও হচ্ছে প্রস্তুতি সভা। এছাড়াও সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততাও বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন নেতাকর্মীরা। ২৮ অক্টোবর ঘিরে বসে নেই আওয়ামী লীগও। ক্ষমতাসীন দলটির পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগিতা, ভ্রাতৃপ্রতীম সব সংগঠনের নেতাকর্মীদের ঢাকাজুড়ে পাহারা দিতে বলছেন নেতারা। অন্যদিকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তারাও ২৮ অক্টোবর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে অনড় বলে জানিয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে জামায়াত সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না। অনুমতি ছাড়া মাঠে নামলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর প্রশাসন অনুমতি না দিলেও যেকোনো মূল্যে সমাবেশ করবে দলটি।
একইদিন সব দলের নেতাদের ঢাকা দখলে নেওয়ার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে জনমনে। বিশেষ করে রাজনীতির বাইরে থাকা নাগরিকদের উদ্বেগ যেন কয়েকগুন বেশি। ঢাকার মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে বলেন, ২৮ তারিখ ছুটি নেব কিনা ভাবতেছি। সবাই মাঠে নামলে ঢাকা শহর অচল হয়ে যাবে। আর মারামারি শুরু হলে কে বাঁচে, কে মরে তা কেউ জানে না। পরিবারের লোকজনও টেনশনে আছে।
২৮ অক্টোবর রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচিকে ঘিরে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে সেজন্য প্রশাসনকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। চালানো হচ্ছে নিরাপত্তা তল্লাশি। এছাড়াও সন্দেহজনক বাসা বাড়ি, হোটেলও তল্লাশি চালানো হবে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিপুল পুলিশ সদস্য মোতায়েন করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানা গেছে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও কড়া পাহারায় থাকবে।
রাজনীতির মাঠে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এতদিন পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল। কথার লড়াই চললেও রাজপথ তুলনামূলক ভালো ছিল। কিন্তু ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে যে উত্তপ্ত হওয়ার আভাস মিলছে সেখান থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে সরে আসতে হবে। খোলা মন নিয়ে আলোচনার টেবিলে বসা জরুরি।
নয়াপল্টনেই বিএনপির মহাসমাবেশ, অন্য কোথাও সম্ভব নয়
২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনেই মহাসমাবেশ আয়োজনে অনড় অবস্থানের কথা পুলিশকে জানিয়েছে বিএনপি। সমাবেশের জন্য বিএনপির কাছে সাতটি তথ্য জানতে চেয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) বুধবার রাতে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বরাবর একটি চিঠি পাঠায়।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়ার পাঠানো এই চিঠিতে সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থান নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বিকল্প আরও দুটি ভেন্যুর নাম প্রস্তাবের অনুরোধসহ আরও কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এই চিঠির উত্তরে বৃহস্পতিবার দুপুরে রুহুল কবির রিজভী পল্টন থানার ওসির কাছে একটি চিঠি পাঠান যাতে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সকল প্রস্ততি ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। অন্য কোনো ভেন্যুতে যাওয়া সম্ভব হবে না।
চিঠিতে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ সম্পর্কিত যেসব তথ্যের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- সমাবেশ বেলা ২টায় শুরু হয়ে মাগরিবের আজানের আগে শেষ হবে, সমাবেশে এক লাখ থেকে সোয়া লাখ লোক হতে পারে, সমাবেশটি পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় ও পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত বিস্তুৃত হতে পারে, সমাবেশে পশ্চিমে বিজয়নগর মোড় এবং পূর্বে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কিছুদূর অন্তর অন্তর মাইক লাগানো হবে, ২৮ অক্টোবর সমাবেশে বিএনপির নেতারা ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন না, সমাবেশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দলের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করবেন যার সংখ্যা ৫০০ জন।
বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই সমাবেশ করবে আ. লীগ
আগামী ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই করতে চায় বলে পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাতে (ওসি) দেওয়া চিঠিতে জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজের সই করা চিঠি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
এতে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চ নির্মাণ ও প্রচার প্রচারণার-কার্যক্রম) ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই অবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার। তাই উপর্যুক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের অনুষ্ঠানস্থল ও তার সংলগ্ন এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা দেওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করবে জামায়াত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, আগামীকাল ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করবে জামায়াত। আর এই মহাসমাবেশ সফলে প্রশাসন এবং দেশবাসীর সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ সফল করার লক্ষে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা জানান। তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমিরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম-উলামার মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে জামায়াত।
ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, জামায়াতে ইসলামী তার সাংবিধানিক অধিকার অনযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর শনিবার রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিতভাবে অবহিত করেছে। পক্ষপাতদুষ্ট এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেছে, ‘জামায়াতকে সমাবেশ করতে দেওয়া হবে না।’ পুলিশের দায়িত্ব হল শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়। তার এই বক্তব্য অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক, এখতিয়ারবহির্ভূত ও বেআইনি। পুলিশ কর্মকর্তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মুজিবুর রহমান বলেন, সংসদ ভেঙে দিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আমরা আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশের কর্মসূচি ইতোমধ্যেই ঘোষণা করেছি। শান্তিপূর্ণ এই মহাসমাবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হয়ে এক দফা দাবি কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এবং সরকারের কোনো ধরনের উসকানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্রবিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আমরা দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
রাস্তায় কোন সমাবেশের অনুমতি দেবে না ডিএমপি: যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব
পুলিশ কোনো রাজনৈতিক দলকে রাস্তায় কর্মসূচি পালন করতে দেবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, রাস্তায় কোনো সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। মাঠ কিংবা খোলা স্থান নির্বাচন করে, সেটি উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে। বৃহস্পতিবার ডিএমপি সদর দপ্তরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার এসব কথা বলেন।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ক্ষমতাসীন দলকে (আওয়ামী লীগ) সমাবেশের বিকল্প ভেন্যুর (স্থান) কথা বলা হয়েছে। বিএনপিকেও কি এমন কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে, জানতে চাইলে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে, অর্থাৎ যারা সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে, তাদের বলা হয়েছে জনদুর্ভোগ কমাতে রাস্তা বাদ দিয়ে খোলা স্থান দেখতে। সেটা খোলা মাঠ হতে পারে। সবাইকে বলা হয়েছে, নিজেরটা নিজেরাই পছন্দ করে ডিএমপিকে জানান।
বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, আমাদের ঢাকা শহর মেগা সিটি (বড় শহর)। এখানে যদি লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়, তাহলে ঢাকার বাসিন্দা যারা আছে, দুই-আড়াই কোটি নগরবাসীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতে সমস্যা হয়। সব দিক বিবেচনা করেই নগরবাসীর স্বার্থে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডিএমপি কমিশনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমাবেশ করতে চাওয়া দলগুলোকে রাস্তা বাদ দিয়ে ভিন্ন স্থানে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। বিকল্প স্থান ঠিক করে আবেদন করলে কমিশনার চিন্তা করে দেখবেন, তারা অনুমতি পাবে কি না।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমি আশা করছি, রাজনৈতিক দলগুলো সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে রাস্তা বাদ দিয়ে খোলা স্থানে সমাবেশ করার কথা ভাববে। বিএনপি পল্টনেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে ডিএমপি কী করবে, এমন প্রশ্নে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতারা কর্মীদের চাঙা রাখার উদ্দেশ্যে অনেক সময় অনেক কিছুই বলেন। আমরা সেটিকে বিচার-বিবেচনায় নিচ্ছি না। আইনে কী আছে, আমরা সেটা বিবেচনা করব। ডিএমপির যে অর্ডিন্যান্স আছে, সেখানে বলা আছে, ঢাকা শহরে কোনো সভা-সমাবেশ করতে হলে অবশ্যই কমিশনারের অনুমতি নিতে হবে। কেউ যদি অনুমতি না নেয়, সেটি আইন অমান্য হবে। তবে আমি আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো আইনের প্রতি বাধ্য থেকে পুলিশের প্রতি সহযোগিতা করবে। আমরাও সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে টানটান উত্তেজনা চলছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে রাজপথে কোন ধরনের অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করলে দলীয়ভাবে মোকাবেলা করে কঠিন জবাব দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে সংগঠনের সকল সকল স্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। একান্ত ওই বৈঠকে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। বিএনপি কর্মসূচির নামে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করলে ক্ষমতাশীল দলের পক্ষ থেকে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। যেকোনো অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করার কৌশলী হবে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে দলের নেতাকর্মীদের সর্বত্র প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনে করে, বিএনপি এবার কর্মসূচির নামে কোন ষড়যন্ত্র করার অপচেষ্টা করলে যেকোনো মূল্যে তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা হবে।
আজকের বৈঠক সূত্র জানায়, আগামী ২৮ অক্টোবর বিএনপিকে রাজপথে কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ধাারাবাহিতা ধরে রাখার লক্ষ্যে সাংগঠনিকভাবে যেকোন ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করবে তারা। বিএনপি নেতাকর্মীরা সারাদেশ থেকে ঢাকায় জড়ো হচ্ছে। তারা রাজধানীসহ ঢাকার পাশ্ববর্তী জেলাগুলোতে অবস্থান করছেন। তারা যাতে কোনো ধরনের অরাজকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে দলের নেতাকর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। শহরের কোথায় কোন বাসা বা স্থানে অপরিচিত বা সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দিয়ে ধরিয়ে দেওয়ারও গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। সমাবেশের দিন বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন না করে কোনো ধরনের সহিংসতা করলেই আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে। প্রয়োজনের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত প্রতিনিধি দেওয়া হয়েছে দলীয় নেতা কর্মীদের।
আওয়ামী লীগের দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, বিএনপি যেহেতু ২৮ অক্টোবর সারাদেশ থেকে ঢাকা এবং আশপাশে এলাকায় তাদের নেতাকর্মীদের অবস্থান নিতে নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে। তাই সেদিন ক্ষমতাসীন দলের কোন নেতা কোথায়, কোন দিকে অবস্থান করবে সে বিষয়েও নির্দেশনা এসেছে বৈঠকে।
বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এস এম কামাল, সাংস্কৃতিক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়াসহ মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন।