চাঁদা দাবিতে ৩০০ বাড়িতে চিঠি, শিশুদের অপহরণের হুমকি

বগুড়া কাহালুতে চাঁদা দাবি করে প্রায় ৩০০ বাড়ির দরজায় চিঠি লাগিয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। চাঁদা না দিলে শিশুদের অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
গত রাতে উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজায় চিঠি দেখতে পান তারা। চাঁদা দাবি করায় গ্রামের মানুষদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অনেক অভিভাবক সন্তানদের স্কুলে যেতে দেননি।
স্থানীয়রা জানান, গ্রামটিতে প্রায় এক হাজার পরিবারের বসবাস। পাঁচ থেকে ১০ বছর বয়সী শিশু আছে প্রায় ৪০০। আজ বিকেলে তারা কেউ মাঠে খেলতে যায়নি।
এদিকে টাকা না দিলে আগামী ৭ অক্টোবর থেকে গ্রামের ছেলেমেয়ে হারিয়ে গেলে কারো কিছু করার থাকবে না বলে পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিষ্ণুপুর গ্রামের দপ্তরিপাড়া, মাজাগাড়িপাড়া, মোন্নপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়া ঘুরে দেখা গেছে প্রতিটি বাড়ির দরজায় কম্পিউটারের কম্পোজ করা ছোট আকারের পোস্টার আঠা দিয়ে লাগানো হয়েছে।
পোস্টারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৬ তারিখের মধ্যে টাকা দিতে হবে। না হলে ৭ তারিখ থেকে আপনাদের ছেলেমেয়ে হারায়ে গেলে আমাদের কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে সেটা না খুঁজে, আমি যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন, তাহলে কিচ্ছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলবেন না। যদি ছেলেমেয়েদের মঙ্গল চান তাহলে লোয়া পুকুর সোলার লাইটের সাথে যে বক্স থাকবে। নিজের টাকার সাথে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে ওই বক্সে ফেলান আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত করুন, ধন্যবাদ।’
বিশেষ দ্রষ্টব্য দিয়ে পোস্টারে আরো লেখা রয়েছে, ‘আমার এই কাগজ আপনি পড়ছেন, তাহলে মনে করেন আপনার ছেলেমেয়েকে তুলে আনতেও পারব। দয়া করে টাকাটা দিয়েন, আমরা ছেলেগুলো ভালো না। ভালো থাকবেন, ৬ তারিখ পর্যন্ত। আল্লাহ হাফিজ।’
ওই গ্রামের নাসিমা আক্তার, মালেকা বেগম, সাজেদা বেগম, পারভিন খাতুন, আলেয়া বেগমসহ অন্যরা জানান, ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করে প্রতিটি বাড়িতে পোস্টার লাগানো হয়েছে।
তারা জানান- ওই গ্রামের অধিকাংশ মানুষই কর্মজীবী। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ কাঠমিস্ত্রি আবার কেউ ইলেকট্রনিক মিস্ত্রির কাজ করেন। মোটামুটি সব পরিবারই স্বচ্ছল। তবে ধনী পরিবারের বসবাস নেই ওই চারপাড়ায়। সকালে প্রতিটি বাড়ির দরজায় এ ধরনের পোস্টারিং দেখে অনেকেই আতঙ্কে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাননি।
বিষ্ণুপুর মাজাগাড়িপাড়ার কাঠমিস্ত্রি নয়ন প্রামাণিক বলেন, ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বাড়ির ইটের দেয়ালে পোস্টার লাগানো। পরে জানতে পারি চারপাড়ার দুই শতাধিক বাড়িতে একই ধরনের পোস্টার লাগানো হয়েছে। পোস্টার পড়ে সবার মধ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।’
তিনি বলেন, ‘আতঙ্কে আমার দুই সন্তানকে আজ স্কুলেই পাঠাইনি। আমি নিজেও কোনো কাজে যাইনি।’
মুরইল ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, চিঠিতে প্রতি পরিবারের কাছে ২০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়েছে। আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে চাঁদার টাকা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে রেখে আসতে বলা হয়েছে। চাঁদা না দিলে শিশুদের অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে প্রেরকের নামের জায়গায় লেখা হয়েছে 'শ্যাডো'।
মুরইল ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘আমাদের ধারণা গ্রামের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা, যারা মাদকের সাথে জড়িত তারাই গ্রামে আতঙ্ক ছড়াতে এ ধরনের পোস্টারিং করেছে। গ্রামের মানুষের মধ্যে চাঁদা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় রবিবার রাত থেকে গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) দিয়ে পুরো গ্রাম পাহারা দেওয়া হবে।’
মোন্না পাড়ার সামছুল শেখ (৫৮) বলেন, 'বিষ্ণুপুর গ্রামের চার-পাঁচটি পাড়ায় প্রতিটি বাড়িতে চাঁদা চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দুই হাজার টাকা দাবি করে আমার বাড়িতেও চিঠি দিয়েছে। আমার একটা বাচ্চা আছে। আমরা ভয়ে আছি।'
মিষ্টিপাড়ার আজিজুল হক বাচ্চু বলেন, আমি আসবাবের ব্যবসা করি। আমার বাড়িতে পাঁচ হাজার টাকা চেয়ে দরজায় আঠা দিয়ে চিঠি সেঁটে দেওয়া হয়েছে। আমার তিন সন্তান। দুজন স্কুলে যায়। আজকে আমি তাদেরকে স্কুলে নিয়ে গেছি। ছেলেরা ভয়ে মাঠে খেলতে যাচ্ছে না।'
ইউপি সদস্য জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'বাইরে থেকে কেউ এসে এ কাজ করার কথা নয়। আতঙ্ক তৈরি করার জন্য স্থানীয় কিছু যুবক এটা করতে পারে।'
এই বিষয়ে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে জানতে চাইলে কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহমুদ হাসান অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। তিনি বলেন, 'এই মিয়া আপনাকে এত কিছু বলতে হবে কেন? আপনি ঘটনাস্থলে এসে তথ্য নেন।'
বিষয়টি জানালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আব্দুর রশিদ বলেন, ওসিকে সতর্ক করা হবে। বিষ্ণুপুর গ্রামে আমি নিজে গিয়েছি। কারা এই কাজ করেছে জানার চেষ্টা করছি। যারাই করুক তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।