আরও একটি ২৮ অক্টোবর! ১৭ বছর আগে ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। সেই দিনের পরিস্থিতির দিকেই হাটছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনীতিতে দেখা দিচ্ছে সেই নির্মম হত্যাযঞ্জের পুনরাবৃত্তি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার ও বিরোধী দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থানে রাজনীতিতে ভর করছে সেই কালো থাবা। অনিশ্চিত পথে যেতে পারে দেশের গণতন্ত্র। সরকারি দলের পক্ষ থেকে আবারও লগি-বৈঠার তাণ্ডব কিংবা শাপলা চত্ত্বরের হেফাজত তাণ্ডবের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। অপরদিকে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে পাল্টা হুমকি কিংবা দখলের হুঁশিয়ারি দেওয়া হচ্ছে। বিশেষকরে ১৭ বছর আগে লগি-বৈঠার তাণ্ডবের সাথে জড়িত আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর পরষ্পর বিরোধী শক্ত অবস্থান নিয়ে শঙ্কিত দেশবাসী। তাছাড়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে জামায়াতকে অনুমতি না দেওয়ার ঘোষণা এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে যে কোন মূল্যে সমাবেশ করার ঘোষণাও জানান দিচ্ছে হেফাজত তাণ্ডবের কথা। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি বৈঠার তাণ্ডবে পথ হারিয়েছিল যে বাংলাদেশ- ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর স্বতঃস্ফূর্ত শান্তিপূর্ণ গণঅভ্যুত্থানে সঠিক পথে ধাবিত হবে বাংলাদেশ বলে প্রচার করছে জামায়াতে ইসলামী। সবমিলিয়ে কি হতে যাচ্ছে ২৮ অক্টোবর তা বলা মুশকিল। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন- ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের পুনরাবৃত্তি হতে পারে এবারের ২৮ অক্টোবর।
২০০৬ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শেষ দিন ছিল ২৮ অক্টোবর। দিনটি ঘিরে ছিল নানা উত্তেজনা-উৎকণ্ঠা। সেদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে ইস্তফাপত্র জমা দেন। ওই দিনটিকে কেন্দ্র করে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ পল্টন ময়দানে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। একই দিনে বিএনপিও নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এবং জামায়াতে ইসলামী বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দেয়। রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কা করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সেই আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয় ২৮ অক্টোবর। ঢাকায় শুরু হওয়া সহিংসতা পরবর্তীতে ছড়িয়ে পড়েছিল দেশব্যাপী। যার ফলে আসে ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
সবার মনে এখন একটিই প্রশ্ন, ১৭ বছর পর আবারও কী একই পেক্ষাপট তৈরি হতে যাচ্ছে? আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে সংসদের বাইরে থাকা প্রধান বিরোধীদল বিএনপি। বামপন্থি জোটগুলোও একই দিন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জোটে না থাকলেও মতিঝিলে এককভাবে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীও। অপর দিকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে শান্তি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবরে সর্বাত্মক সংঘাতের আশঙ্কা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ পল্টন ময়দান ও আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। সমাবেশের এলাকা এবং আশপাশে প্রায় ১৫ হাজারের মতো পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। সে সময় আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে নির্ধারিত এলাকায় সমাবেশ শুরু করতেই শুরু হয় সংঘাত-সহিংসতা। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে জামায়াত-শিবিরের চার কর্মী ও ওয়ার্কার্স পার্টির এক কর্মী মারা যান। ঢাকার এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন শহরে। ওই দিন সারা দেশে ১১ জন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশিত হয় গণমাধ্যমে।
২০০৬ সালের সংঘাতের উপলক্ষ ছিল নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এবারের উপলক্ষও একই, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তবে এবারের সমস্যাটি ভিন্ন। সে সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থাকলেও কে হবেন সরকারপ্রধান তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এবারের ইস্যু তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আওয়ামী লীগ সংবিধানের ভেতরে থেকে নির্বাচন করতে চায়। বিএনপি ফের তত্ত্বাধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অনড়। ১৯৯৫-৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যন্য দলকে নিয়ে ক্ষমতাসীন বিএনপির বিরুদ্ধে অনড় ছিল। এবার বিএনপি-জামায়াতকে সরাসরি সঙ্গে না রাখলেও অন্যান্য দলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অনড় রয়েছে। তবে সরকারের পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইস্যুতে জামায়াতে ইসলামী স্বতন্ত্রভাবে আন্দোলন করছে।
১৭ বছর পর ২৮ অক্টোবর ঘিরে আবারও মুখোমুখি রাজনৈতিকদলগুলো। ওই সময় আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল। এবার বিএনপি বিরোধী দলে! তবে এবার বিএনপিকে শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি দিতে চায় প্রশাসন। তবে জামায়াতকে অনুমতি না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গোয়েন্দা সংস্থ্যার বরাত দিয়ে প্রশাসন বলছে, বিএনপি মহাসমাবেশ ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে এমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি। তবে জামায়াত কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে কি না তা নিয়েও কোনো তথ্য দেয়নি প্রশাসন। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জামায়াতের সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, জামায়াতকে সমাবেশের কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। তাদের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা হচ্ছে।
২৮ অক্টোবর ঘিরে জনসাধারণের মনে আতঙ্ক বেড়ে গেছে। জনমনে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে। রাজনৈতিক দলগুলো কর্মসূচি ঘোষণার দেওয়ার পরপরই আতঙ্ক বেড়ে গেছে। ২০০৬ সালের সংঘাতে রাজধানীসহ দেশের যেসব জায়গায় সংঘর্ষ হয় সেখানে অর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। সেদিন সংঘর্ষের পর বায়তুল মোকাররমসহ আশপাশের এলাকায় থাকা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে বেশ কয়েক দিন। পরিস্থিতি শান্ত থাকবে না কী আবারও উত্তপ্ত হবে সেটি নির্ভর করবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আচরণের ওপর। তারা যদি শান্ত থাকেন তাহলে শান্তিপূর্ণ ২৮ অক্টোবর দেখবে বাংলাদেশ। যদি তেমনটা না হয় তবে কী হবে?
বিএনপির প্রস্তুতি : ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে দলের অঙ্গ-সংগঠন, সাংগঠনিক বিভাগ, মহানগর ও জেলা ও উপজেলার নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশে সাধারণ জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দলের নেতাকর্মীরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর নয়াপল্টনে ২২ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা করেছে যুব দল। সভায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেছেন, এই সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ হচ্ছে দেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা। জনবিচ্ছিন্ন এই সরকার আবারও অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এজন্য আবারও ভোট চুরির প্রকল্প নিয়েছে। তবে এবার আর সেটা হতে দেওয়া হবে না। দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক বিশ্ব এক হয়েছে। অবৈধ এই সরকারের এবার আর রেহাই নেই। একই বিষয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ২৩ অক্টোবর প্রস্তুতি সভা করেছে ছাত্রদল। সভায় সভাপতির বক্তব্যে রাশেদ ইকবাল খান বলেছেন, ছাত্রদলের নেতাদের ওপর জাতিকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্ত করার যে ঐতিহাসিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জীবনের বিনিময়ে হলেও সেই দায়িত্ব পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ঐতিহাসিক এই দায়িত্ব পালনে ছাত্রদল এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত। ২৮ অক্টোবর থেকে যেই মহাযাত্রা শুরু হবে, ছাত্রদল সেখানে অতীতের মতোই ভ্যানগার্ডের ভূমিকা পালন করবে।
যুগপথে থাকা দলের প্রস্তুতি : সরকার পতনের লক্ষ্যে চলমান একদফা আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচি নির্ধারণে ২৩ অক্টোবর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। একই ইস্যুতে ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, লেবার পার্টি, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, এনডিএম প্রভৃতি দলের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। সবগুলো বৈঠকে লন্ডন থেকে তারেক রহমান যুক্ত হয়ে নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। বৈঠকে ২৮ অক্টোবরের পরের কর্মসূচি কী হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছায় বিএনপি ও জোটের অন্যান্য নেতারা। সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে আগামী ৩০ অক্টোবর সচিবালয় ঘেরাওয়ের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি ও তার মিত্র দলগুলো। আগামী ২৮ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় ঢাকার মহাসমাবেশ থেকে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীর প্রস্তুতি : ২০১৩ সালের পর আলোচনার বাইরে থাকলেও চলতি বছরের ১০ জুন ঢাকায় সমাবেশ করে আবারও আলোচনায় আসে জামায়াত। ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে বেশ সরব জামায়াতে ইসলামী। এমনকি দলটির সমর্থিত ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরও বৃহৎ পরিসরে বিক্ষোভ মিছিল করছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন মহানগর ও উপশহরে। সোমবার ঢাকায় সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে জামায়াত। তাদের লক্ষ্য একই তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সরকারের পতন ও সুষ্ঠু নির্বাচন। চলতি বছরের ১০ জুন সর্বশেষ অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করে দলটি এরপরই যতবারই অনুমতি চাওয়া হয়েছে তার একটিরও অনুমতি দেয়নি প্রশাসন। তবে জামায়াত তাদের কর্মসূচি বন্ধ করেনি। অনুমতি ছাড়াই ঢাকাসহ সারা দেশে মিছিল ও সমাবেশ করেছে। তবে ২৮ অক্টোবর নিয়ে ভিন্ন চিন্তা রয়েছে দলটির। জামায়াতের একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২৮ অক্টোবরের সমাবেশ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে তারা। ইতোমধ্যে সংগঠন বিভাগ, মহানগর, নগর, থানা ও ইউনিটসহ সর্বস্তরে মিটিং করছে। জামায়াতের কেন্দ্রীয় একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২৮ অক্টোবর প্রশাসন অনুমতি না দিলেও যে কোনো মূল্যে সমাবেশ বাস্তবায়ন করবে দলটি। মতিঝিল জায়গা না পেলেও তার আশপাশে যে কোনো জায়গায় নিজেদের শক্তি জানান দিবে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে সুশৃঙ্খলভাবে সমবেত হয়ে এক দফা দাবি কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থা বাস্তবায়নের আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান জানিয়ে এক বিবৃতিতে জানায়, সরকারের কোনো ধরনের উসকানি, অসাংবিধানিক ও গণতন্ত্রবিরোধী অপতৎপরতায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য নির্বাহী পরিষদ দেশবাসী এবং সংগঠনের সর্বস্তরের জনশক্তির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। জামায়াত ২৮ অক্টোবর সমাবেশের জন্য ডিএমপির কাছে সহযোগিতা চেয়ে যে আবেদন করেছে তা নাকচ করে দিয়েছে প্রশাসন। এর পরই গণমাধ্যমে বার্তা পাঠায় দলটি। বার্তায় জামায়াত জানায়, জামায়াতে ইসলামী সাংবিধানিক অধিকার অনুযায়ী আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকা মহানগরীর শাপলা চত্বরে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ বাস্তবায়নে সহায়তা চেয়ে পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানিয়েছে। পুলিশের দায়িত্ব হলো শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা, বাধা দেওয়া নয়।
আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি : রাজপথ দখলে রাখার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল বলেছেন, সতর্ক পাহারায় থাকবেন। আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণ হবে। আর ছাড়বো না। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন- অনুমতি না দিলে অলিগলি দখল করবেন। অলিগলি দখল করলে নাকি সব দরজা খুলে যাবে গয়েশ্বর বাবুকে স্বাগত জানাতে। মনে নাই, আপনি কোরাল মাছের ঝোল খেয়ে আসছেন! এবার আপনার কপাল খারাপ। আমরা আটঘাট বেঁধে নেমেছি। অলিগলিতেও পালাবার পথ পাবেন না। আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, অপশক্তি থেকে আমাদের দেশকে মুক্ত করার আন্দোলন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চেতনায় মননে বাংলাদেশের জনগণ শপথ নিয়েছে। তারা অপশক্তি ও অপরাজনীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করবে। তিনি বলেন, রাস্তা ছাড়বেন না। আক্রমণ করবো না। এ পর্যন্ত করি নাই। তাদের ভগবান অবতার অনেক শক্তি আছে। অনেকে খবর নেয়। আমরা আক্রমণে ছিলাম না। করি নাই। এবার সতর্ক পাহারায় আছি। আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কেন ছাড়বো? অপশক্তিকে রুখতে হবে একসঙ্গে।
জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে ঢাকায় কোনো সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন। আর ঢাকার কোথায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে, ডিএমপি কমিশনার নিশ্চয়ই তাদের অনুমতি দেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত দল নয়। কাজেই তারা জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে যদি আসে, তাহলে তাদের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। এখনো আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলকেই ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকার রাজপথ আওয়ামী লীগের দখলে থাকবে বলে জানিয়েছেন তথ্য সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। বিএনপিকে মোকাবিলার জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, আগামী ২৮ অক্টোবর নিয়ে বিএনপি যে স্বপ্ন দেখছে সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিতে হবে। ঢাকা শহর থাকবে জয় বাংলার দখলে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ২৮ তারিখ আমি আপনাদের সঙ্গে রাজপথে থাকবো। আমরা কোনো কিছু কেড়ে নিতে দেব না। ২৮ অক্টোবর যেমন আমরা ‘লগি-বৈঠা’ নিয়ে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছিলাম, ঠিক সেভাবে এবারও আমরা গণতন্ত্রকে রক্ষা করবো। মেয়র তাপস বলেন, বিএনপির সমাবেশ থেকে জনগণের ক্ষতি করার কোনো সুযোগ দেওয়া হবে না বলে। এ সময় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেয়র তাপস আরও বলেন, ২৮ তারিখ আমাদের জন্যে অগ্নিপরীক্ষা। এ পরীক্ষায় আমরা ইনশাআল্লাহ্ বিজয়ী হবো।
এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করছে। সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ অশান্তি সৃষ্টি করলে বিএনপি দাঁড়াতে পারতো না। বিএনপি আবারও ভুল পথে হাঁটছে। দিনক্ষণ তারিখ দিয়ে আন্দোলন হয় না। দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলনের ডাক দিলে সেই আন্দোলন খাদে গিয়ে পড়ে। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে মানুষের সেবা করার জন্য। আওয়ামী লীগ অশান্তি করবে না, কেউ যদি অশান্তি করতে চায় তাদের খবর আছে। সহ্য অনেক করেছি সহ্যের একটা সীমা আছে। অশান্তি হলে ছাড় দেওয়া হবে না। ভয় আমাদের দেখাবেন না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি : ২৮ অক্টোবর নিয়ে প্রশাসনকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের তরফ থেকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন স্বাভাবিক থাকে, জনজীবন যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দিয়েছি। জামায়াতে ইসলামীকে রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জামায়াতের সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, জামায়াতকে সমাবেশের কোনো অনুমতি দেওয়া হবে না। তাদের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে কথা বলেনি ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার। তবে ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশ ঘিরে রাজধানী ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। এসব প্রবেশ মুখে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে জানা যায়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সংঘর্ষ, প্রাণহানির শঙ্কা : বিএনপি ও জামায়াতের সমাবেশ ঘিরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আগাম গোয়েন্দা প্রতিবেদন দিয়েছে সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থা। যেখানে বলা হয়েছে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হতে পারে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুলিশ বলছে, সমাবেশের দিন ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হতে পরে। এ নিয়ে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।