বর্ষার দূত কদম ফুল!

‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান, আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’। জ্যৈষ্ঠের প্রখরতায় অভিমানী আকাশ একটু পরপরই গোমড়া মুখ করে কালো মেঘকে সালিশের জন্য ডেকে এনে অঝোর ধারায় কান্না করে। নিমিষেই শুরু হয়ে যায় মুষলধারায় বৃষ্টি! মাঝে মধ্যে যখন কালো মেঘ ব্যস্ত থাকে, আকাশ তখন গাল ফুলিয়ে একা একাই কাঁদতে বসে। তখন রোদ-বৃষ্টি দুটোই একসাথে দেখা যায়। ছোট বাচ্চারা ছড়া কাটে, ‘রোদ হয় বৃষ্টি হয় খেঁকশিয়ালের বিয়ে হয়।’ সূর্য্যি মামার সাথে আকাশের মান-অভিমান খেলার নীরব দর্শক মাটির পুতুলেরা ততক্ষণে বুঝে নেয় আকাশের সাথে গ্রীষ্মের প্রখরতা কমাতে নেমে পড়েছে আম, জাম, কাঁঠালসহ নানা ফল। তাদের ঘ্রাণে মুখরিত চারপাশ। ঠিক তার পরপরই আগমন ঘটে বর্ষার সঙ্গী কদম ফুলের। আর কদম বর্ষাকালের যেন আগমনী বার্তা।
আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষাকাল। গাছে গাছে দেখা মেলে পরিবেশের আরেক অতিথি কদম ফুলের। এই কদম ফুল ললনাপ্রিয়, সুরভী, কর্ণপূরক, বৃত্তপুষ্প নামেও পরিচিত। দেখতে বলের মতো গোল, সরু সবুজ পাতার ডালে ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস আর পূর্ণ প্রস্ফুটিত মঞ্জুরির সাদা-হলুদে মেশানো রঙ কদমকে করেছে অনন্য।
কদম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম: Neolamarckia cadamba. একটি সুপরিচিত ও প্রাচীন ফুল। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে কদম ফুল জন্মায়। এটি নদীর তীর, জলাভূমি ও সমতল ভূমিতে ভালো জন্মে। কদম ফুল বর্ষাকালে ফোটে। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত এর মৌসুম। বর্ষার প্রথম বৃষ্টির পরপরই কদম ফুটে উঠে।
কদম ফুল সাধারণত হালকা হলুদাভ বা সোনালি রঙের হয়। মাঝে মাঝে হালকা কমলা রঙও দেখা যায়। আকারে ছোট ছোট অসংখ্য ফুল একত্রিত হয়ে গোলাকৃতি বলের মতো আকার ধারণ করে। গন্ধ মৃদু, মধুর ও মনমুগ্ধকর সুবাস ছড়ায়। গাছ কদম গাছ সাধারণত সোজা ও দীর্ঘ হয়ে থাকে। পাতা বড়, ডিম্বাকার এবং গাঢ় সবুজ রঙের। ফল হিসেবে কদম মাংসল, টক তবে বাদুড় ও কাঠবিড়ালীর প্রিয় খাদ্য। আর ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন।
শীতে কদমের পাতা ঝরে আর যখন কচি পাতা গজায় তখন আগমন ঘটে বসন্ত কালের। কদমের গাছ থেকে যেমন জ্বরের ওষুধ তৈরি করা হয়, তেমনি এ গাছ দ্রæত বাড়ে, বিধায় একে জ্বালানি কাঠ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।