বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে থাকছে সপ্তাহজুড়ে উৎসব। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত এ আয়োজন চলবে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে। আর আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর রয়েছে টানা তিন দিনের ছুটি। তাই এবার লাখো পর্যটকের সমাগম ঘটবে এমন আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
আর সপ্তাহব্যাপী উৎসব উপলক্ষে হোটেল মোটেল রিসোর্টে ৬০ থেকে ৫০ শতাংশ, রেস্তোঁরায় ১৫ শতাংশ এবং কক্সবাজারগামী বিমান ও দূরপাল্লার বাস কর্তৃপক্ষ মূল্যছাড়সহ বিশেষ সুবিধার ঘোষণা দিয়েছে।
অনুষ্ঠানের সময়সূচি
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে, সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভাল শুরু হবে আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর। এর আগে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় উন্মোচন হয় থিম সং। ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টায় থেকে ঘণ্টাব্যাপী চলবে সৈকত এলাকা পরিচ্ছন্নতা অভিযান।
২৫ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে শিশুদের চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা। ২৭ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় সৈকতের লাবনী পয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে পুনরায় লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত থাকছে বর্ণাঢ্য র্যালী। এরপর সকাল সাড়ে ৯টায় উদ্বোধন করা হবে পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালের। সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে থাকছে বৃক্ষরোপন ও আলোচনা সভা। আর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট হতে মহেশখালী জেটি পর্যন্ত চলবে নৌ-র্যালী।
প্রতিদিন বিকাল ৩টায় বিনামূল্যে চলবে সার্কাস প্রদর্শনী। বিকাল সাড়ে ৪টায় বীচ বাইক র্যালী, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এরপর ডিজে শো এবং আতশবাজি প্রদর্শনী।
২৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় রোড শো, বিকাল সাড়ে ৪টায় জেটস্কি শো ও সেমিনার। ২৯ সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় ঘুড়ি উৎসব, বিকাল সাড়ে ৪টায় সেমিনার, সাড়ে ৫টায় ম্যাজিক শো, সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ফায়ার স্পিন, সন্ধ্যা ৭টায় লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ৯টায় ফানুস উৎসব, রাত ১১টায় ডিজে শো।
৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় সার্ফিং প্রদর্শনী, বিকাল ৩টায় ঘুড়ি উৎসব, বিকাল ৪টায় বীচ ম্যারাথন, বিকাল ৫টায় সেমিনার, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ডিজে শো। ১ অক্টোবর বিকাল ৫টা সেমিনার ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
২ অক্টোবর বিকাল ৪টায় বীচ ভলিবল, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাত ৮টায় বিদেশি নাগরিকদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ১১টায় ডিজে শো। ৩ অক্টোবর বিকাল ৩টায় সেমিনার, বিকাল ৪টায় পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠান, বিকাল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গ্র্যান্ড সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কনসার্ট, রাত সাড়ে ১১টায় ডিজে শো ও রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে আতশবাজি প্রদর্শনী।
শিল্পী ও ব্যান্ড দল
বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কার্নিভালে দর্শক মাতাবে দেশের বিখ্যাত ব্যান্ড দল চিরকুট, আভাস, সুনামগঞ্জের শাহ আবদুল করিমের দল, কুষ্টিয়ার লালন গীতির দল, সিলেট, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহের পালা গানের দলসহ জনপ্রিয় ব্যান্ড ও সংগীত শিল্পীরা। নৃত্য পরিবেশন করবেন তিন পার্বত্য জেলা- বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটিসহ কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা।
অনুষ্ঠানকে ঘিরে সাঁজসজ্জা
উৎসবের আয়োজন ঘিরে চলছে সার্বিক প্রস্তুতি। রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, লাবণী মঞ্চের সামনে সড়কের দুপাশে তৈরি হচ্ছে স্টল। হোটেল কল্লোলের সীমানাপ্রাচীর ঘেঁষেও দোকানপাট বসানো হচ্ছে। তিন রাস্তার মুখে বসানো নৌকা থেকে কিছু দূরে নির্মিত হচ্ছে মঞ্চ। লাবলী পয়েন্টের প্রবেশ পথ সাজানো হয়েছে রঙ্গিন ছাতায়। একই সঙ্গে সৈকতের বালুকাবেলায় তৈরি হচ্ছে বালু ভাস্কর্য।
ভাস্কর্য শিল্পী শেখ রাসেল বলেন, ‘সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দুটি বালু ভাস্কর্য নির্মিত হবে। একটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও অপরটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। আশা করি, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ভাস্কর্য নির্মাণের কাজ শেষ হবে।’
বিশেষ মূল্যছাড়
এদিকে সপ্তাহব্যাপী পর্যটন মেলা উপলক্ষে হোটেল, মোটেল, পরিবহন ব্যবস্থা ও রেস্তোরাঁর মালিকরাও দিচ্ছেন আকর্ষণীয় ছাড়। হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হচ্ছে। সকল রেস্তোরাঁয় খাবারের ওপর ও সকল বাস ভাড়ার ওপর ১৫ ও ২০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ ছাড়াও হেলিকপ্টারে জয় রাইড, টিউব ভাড়া, কিটকট চেয়ার ভাড়া, প্যারাসেইলিং রাইড, জেটস্কি-বিচ বাইক, লকার ভাড়া, গাড়ি পার্কিং ছাড়সহ চাঁদের গাড়ি ভাড়া ও বিমান ভাড়াতেও থাকছে বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।
এরই মধ্যে আগামী ২৮ থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা তিনদিনের ছুটিতে শতভাগ বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছে তারকামানের হোটেলগুলো।
হোটেল সী-গালের ম্যানেজার নুর মোহাম্মদ রাব্বী বলেন, ‘টানা ছুটি ও সপ্তাহব্যাপি মেলা ও বীচ কার্নিভালকে কেন্দ্র করে নতুন সাঁজে সাঁজানো হয়েছে হোটেলকে। টানা তিনদিনের ছুটিতে হোটেল শতভাগ রুম বুকিং হয়েছে। আশা করি পর্যটকরা যেমন আনন্দ পাবে ঠিক তেমনি ভালো ব্যবসাও হবে।’
হোটেল প্রাসাদ প্যারাডাইসের ফ্রন্ট অফিসার একে রানা বলেন, ‘পর্যটন মেলা ও বীচ কার্নিভাল উপলক্ষে ছাড় দেওয়ায় টানা তিনদিনের ছুটিতে সব রুম বুকিং হয়েছে। এখন পর্যটকরা আসলে তাদের স্বাগত জানাবো।’
এর মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কক্সবাজার ভ্রমণে আসতে ইচ্ছুক পর্যটকরা অগ্রিম বুকিংয়ের ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিবর্তে অতিরিক্ত টাকা দাবি অভিযোগ তুলেছেন আবাসিক হোটেলে, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ‘সাত দিনব্যাপী চলা এই পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভালে কক্সবাজারসহ দেশের ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। বিশ্ববাসীর সামনে কক্সবাজারকে উপস্থাপন করতেই এ মেলার আয়োজন। আশা করি এ আয়োজনে উৎসবের নগরীতে পরিণত হবে পর্যটন নগরী কক্সবাজার।’
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের পুলিশ সুপার জিললুর রহমান বলেন, ‘পুরো এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম আশা করা হচ্ছে। সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কয়েক স্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’