ঢাকা ০২:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

তিব্বতে ভয়াবহ তুষারঝড়, এভারেস্ট উপত্যকায় আটকা অনেক পর্যটক

ছবি : সংগৃহীত

তিব্বতের এভারেস্ট পর্বতের পূর্ব দিকের কার্মা ভ্যালিতে ভয়াবহ তুষারঝড়ে আটকা পড়া শত শত পর্যটককে উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে ৩৫০ জন পর্যটককে নিরাপদে সরিয়ে কিউডাং শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ২০০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা গেছে বলে জানিয়েছে সিসিটিভি।

চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে বহু পর্যটক তিব্বতের এই দুর্গম উপত্যকায় ঘুরতে যান। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে হঠাৎ শুরু হওয়া প্রবল তুষারপাত ও বৃষ্টিতে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যায়। পরদিন শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকা আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে প্রায় এক হাজার মানুষ সেখানে আটকা পড়ে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিমু নিউজ।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে পর্যটক চেন গেশুয়াং বলেন, শীত আর ভেজা পরিবেশে আমাদের মধ্যে হাইপোথারমিয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। রাতভর তুষারঝড় আর বজ্রপাতের মধ্যে কাটিয়েছি আমরা। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন আবহাওয়া অক্টোবর মাসে কখনও দেখিনি। এমনকি আমাদের গাইডও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

এভারেস্টের কার্মা উপত্যকাটি তুলনামূলক সবুজ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যেখানে কাঞ্চুং গ্লেসিয়ারের গলিত পানি প্রবাহিত হয়। তবে এই তুষারঝড় মূলত পূর্বাংশে আঘাত হানলেও এভারেস্টের উত্তর অংশে, অর্থাৎ নর্থ ফেস এ এমন কোনো বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

চীনা টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, শতাধিক গ্রামবাসী ও উদ্ধারকর্মী বর্তমানে তুষার পরিষ্কারের কাজ করছেন এবং আটকে পড়া ট্রেকারদের পর্যায়ক্রমে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় গাইড ও মালপত্র বহনকারী ইয়াক সহকারীদের সবার উদ্ধার নিশ্চিত হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

অন্য এক ট্রেকার এরিক ওয়েন জানান, আমরা পঞ্চম ক্যাম্পে ছিলাম। রাতে সিদ্ধান্ত নিই নেমে আসতে হবে। তুষার এত বেশি পড়ছিল যে, প্রতি ১০ মিনিটে তাঁবুর ওপর থেকে বরফ সরাতে হচ্ছিল, না হলে তা ভেঙে পড়ত।

এই বিপর্যয়ের পর শনিবার সন্ধ্যা থেকে এভারেস্ট সিনিক এরিয়াতে পর্যটকদের প্রবেশ এবং টিকিট বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে তিব্বতের দক্ষিণে নেপালের পাহাড়ি এলাকাতেও একই সময়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়াবহ ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। নেপালের ইলাম জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিধসে কমপক্ষে ৪৭ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

তিব্বতে ভয়াবহ তুষারঝড়, এভারেস্ট উপত্যকায় আটকা অনেক পর্যটক

আপডেট সময় : ০৮:১৬:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ অক্টোবর ২০২৫

তিব্বতের এভারেস্ট পর্বতের পূর্ব দিকের কার্মা ভ্যালিতে ভয়াবহ তুষারঝড়ে আটকা পড়া শত শত পর্যটককে উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে, ইতোমধ্যে ৩৫০ জন পর্যটককে নিরাপদে সরিয়ে কিউডাং শহরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও প্রায় ২০০ জনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা গেছে বলে জানিয়েছে সিসিটিভি।

চীনের জাতীয় দিবস উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে বহু পর্যটক তিব্বতের এই দুর্গম উপত্যকায় ঘুরতে যান। তবে শুক্রবার বিকেল থেকে হঠাৎ শুরু হওয়া প্রবল তুষারপাত ও বৃষ্টিতে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে যায়। পরদিন শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকা আবহাওয়া বিপর্যয়ের ফলে প্রায় এক হাজার মানুষ সেখানে আটকা পড়ে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জিমু নিউজ।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে পর্যটক চেন গেশুয়াং বলেন, শীত আর ভেজা পরিবেশে আমাদের মধ্যে হাইপোথারমিয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছিল। রাতভর তুষারঝড় আর বজ্রপাতের মধ্যে কাটিয়েছি আমরা। অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এমন আবহাওয়া অক্টোবর মাসে কখনও দেখিনি। এমনকি আমাদের গাইডও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

এভারেস্টের কার্মা উপত্যকাটি তুলনামূলক সবুজ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত, যেখানে কাঞ্চুং গ্লেসিয়ারের গলিত পানি প্রবাহিত হয়। তবে এই তুষারঝড় মূলত পূর্বাংশে আঘাত হানলেও এভারেস্টের উত্তর অংশে, অর্থাৎ নর্থ ফেস এ এমন কোনো বিপর্যয়ের খবর পাওয়া যায়নি।

চীনা টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, শতাধিক গ্রামবাসী ও উদ্ধারকর্মী বর্তমানে তুষার পরিষ্কারের কাজ করছেন এবং আটকে পড়া ট্রেকারদের পর্যায়ক্রমে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। তবে স্থানীয় গাইড ও মালপত্র বহনকারী ইয়াক সহকারীদের সবার উদ্ধার নিশ্চিত হয়েছে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

অন্য এক ট্রেকার এরিক ওয়েন জানান, আমরা পঞ্চম ক্যাম্পে ছিলাম। রাতে সিদ্ধান্ত নিই নেমে আসতে হবে। তুষার এত বেশি পড়ছিল যে, প্রতি ১০ মিনিটে তাঁবুর ওপর থেকে বরফ সরাতে হচ্ছিল, না হলে তা ভেঙে পড়ত।

এই বিপর্যয়ের পর শনিবার সন্ধ্যা থেকে এভারেস্ট সিনিক এরিয়াতে পর্যটকদের প্রবেশ এবং টিকিট বিক্রি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে তিব্বতের দক্ষিণে নেপালের পাহাড়ি এলাকাতেও একই সময়ে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ভয়াবহ ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। নেপালের ইলাম জেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমিধসে কমপক্ষে ৪৭ জন নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা।