
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ‘Genotype IIIb’ ধরনের চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাস (Chicken Anemia Virus) শনাক্ত করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক। দীর্ঘদিন ধরে দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ কম থাকলেও সম্প্রতি নরসিংদীসহ বিভিন্ন এলাকায় এর উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে, যা দেশের পোলট্রি খাতে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
বিষয়টি শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) নিশ্চিত করেন বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন। তার তত্ত্বাবধানে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মারজানা আকতার এই গবেষণা পরিচালনা করেন। ‘বাংলাদেশে মুরগির চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাসের আণবিক অনুসন্ধান ও জিনগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই গবেষণা সম্পন্ন হয়। গবেষণার আর্থিক সহায়তা প্রদান করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)। গবেষণার ফলাফল আন্তর্জাতিক স্বীকৃত জার্নাল Microbiology Spectrum এ প্রকাশিত হয়েছে।
ড. গোলজার হোসেন জানান, আগে নিয়মিত ভ্যাকসিনেশন করার কারণে দেশে এই ভাইরাসের তেমন প্রাদুর্ভাব ছিল না। তবে ২০২৩ সালে নরসিংদীর একটি বাণিজ্যিক ব্রয়লার খামারে রোগটি হঠাৎ করে দেখা দেয় এবং পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এ কারণে গভীরভাবে ভাইরাসটি নিয়ে গবেষণা শুরু করা হয়।
গবেষক মারজানা আকতার বলেন, আক্রান্ত মুরগির মধ্যে অ্যানিমিয়া, ফ্যাকাশে ঝুঁটি এবং নীলচে ডানা জাতীয় লক্ষণ দেখা যায়। ময়নাতদন্তে thymus, spleen, bursa, liver ও bone marrow-এ বিভিন্ন পরিবর্তন ধরা পড়ে। পরীক্ষাগারে সংগৃহীত নমুনার ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভাইরাসটির উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। এরপর সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং করে জানা যায়, ভাইরাসটি Genotype IIIb প্রজাতির, যা আগে বাংলাদেশে কখনো পাওয়া যায়নি। তার মতে, এই গবেষণা খামারিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তারা আরও জানান, ভাইরাসটির জিনগত গঠন চীনের একটি স্ট্রেইনের সাথে মিল রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অথবা পোলট্রি আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে দেশে প্রবেশ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভাইরাসটির VP3 প্রোটিনে নতুন মিউটেশন ধরা পড়েছে, যা রোগের তীব্রতা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাসে ভূমিকা রাখতে পারে।
অধ্যাপক গোলজার বলেন, দেশীয় চিকেন অ্যানিমিয়া ভাইরাসের জিনোমিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ এবং ভাইরাসটির বিস্তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাই গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল। কারণ, এই ভাইরাসে আক্রান্ত মুরগির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় এবং খামারিদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। স্থানীয় ভাইরাস প্রজাতির জিনোম বিশ্লেষণের মাধ্যমে ভবিষ্যতে টিকা উন্নয়ন, রোগ নির্ণয়ের নির্ভুলতা বৃদ্ধিতে ও জাতীয় পর্যায়ের নজরদারি কার্যক্রমে সহায়তা করবে।
গবেষকরা মনে করেন, দেশে নতুন এই জেনোটাইপের ভাইরাসের বিস্তার রোধে জাতীয় পর্যায়ে ভাইরোলজিক্যাল মনিটরিং, ব্রিডার ফ্লক ভ্যাকসিন আপডেট এবং খামারে বায়োসিকিউরিটি জোরদার করাই এখন সময়ের দাবি।