ঢাকা ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২

প্রেম-প্রতিশোধে খুন, জবানবন্দির পর বর্ষার জামিন আবেদন খারিজ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ১৫ দিনের মাথায় আসামি ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালত এ আদেশ দেন।

এদিন বর্ষার আইনজীবী মাহমুদুল হাসান শহীদ আদালতে জামিন আবেদন দাখিল করে জানান, তার মক্কেল বাংলাদেশের একজন স্থায়ী নাগরিক ও আইন মেনে চলা ব্যক্তি। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন; পুলিশ অহেতুক হয়রানির উদ্দেশ্যে ২১ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এজহারে বর্ষার বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তিনি একজন কোমলমতি কিশোরী ও শিক্ষার্থী। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার জামিন মঞ্জুর করা প্রয়োজন বলে আবেদন করেন তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা চৌধুরী সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, বর্ষা এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এবং তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জামিন পেলে তিনি পলাতক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত বর্ষার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এর আগে, ২১ অক্টোবর বর্ষাসহ তিন আসামি—বর্ষার প্রেমিক মাহির রহমান ও তার বন্ধু ফারদীন আহমেদ আয়লান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। একইদিন প্রীতম নামে আরও একজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।

পুলিশ জানায়, বর্ষা ও মাহিরের মধ্যে দেড় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জোবায়েদ প্রায় এক বছর ধরে বর্ষাকে টিউশন করাতেন, যার মাধ্যমে বর্ষা ও শিক্ষকের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। বিষয়টি জানার পর মাহির ও বর্ষার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। একপর্যায়ে বর্ষা মাহিরকে জোবায়েদকে হত্যার প্ররোচনা দেন বলে পুলিশ জানায়। এরপর মাহির ও তার বন্ধু আয়লান হত্যার পরিকল্পনা করে কেরানীগঞ্জের আগানগর বউবাজার এলাকা থেকে ৫০০ টাকায় একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনেন।

২১ অক্টোবর নিহতের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বংশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, জোবায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করাতেন। ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বংশাল এলাকার নুর বক্স লেনের একটি বাসায় পড়াতে যান। সেদিন সন্ধ্যায় বর্ষা জোবায়েদের ভাইকে মেসেঞ্জারে জানায়, “স্যারকে খুন করে ফেলেছে।”

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে এনায়েত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিঁড়ি ও দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান এবং তৃতীয় তলায় গিয়ে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ সিঁড়িতে উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

মালিবাগে তরুণী সুরভীর মরদেহ বস্তাবন্দি অবস্থায় উদ্ধার

প্রেম-প্রতিশোধে খুন, জবানবন্দির পর বর্ষার জামিন আবেদন খারিজ

আপডেট সময় : ০৫:২৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ নভেম্বর ২০২৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারের ১৫ দিনের মাথায় আসামি ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তারের আদালত এ আদেশ দেন।

এদিন বর্ষার আইনজীবী মাহমুদুল হাসান শহীদ আদালতে জামিন আবেদন দাখিল করে জানান, তার মক্কেল বাংলাদেশের একজন স্থায়ী নাগরিক ও আইন মেনে চলা ব্যক্তি। তিনি এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন; পুলিশ অহেতুক হয়রানির উদ্দেশ্যে ২১ অক্টোবর তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এজহারে বর্ষার বিরুদ্ধে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তিনি একজন কোমলমতি কিশোরী ও শিক্ষার্থী। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তার জামিন মঞ্জুর করা প্রয়োজন বলে আবেদন করেন তিনি।

রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা চৌধুরী সুমন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, বর্ষা এই হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এবং তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। জামিন পেলে তিনি পলাতক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আদালত বর্ষার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এর আগে, ২১ অক্টোবর বর্ষাসহ তিন আসামি—বর্ষার প্রেমিক মাহির রহমান ও তার বন্ধু ফারদীন আহমেদ আয়লান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। একইদিন প্রীতম নামে আরও একজন সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।

পুলিশ জানায়, বর্ষা ও মাহিরের মধ্যে দেড় বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জোবায়েদ প্রায় এক বছর ধরে বর্ষাকে টিউশন করাতেন, যার মাধ্যমে বর্ষা ও শিক্ষকের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। বিষয়টি জানার পর মাহির ও বর্ষার মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয়। একপর্যায়ে বর্ষা মাহিরকে জোবায়েদকে হত্যার প্ররোচনা দেন বলে পুলিশ জানায়। এরপর মাহির ও তার বন্ধু আয়লান হত্যার পরিকল্পনা করে কেরানীগঞ্জের আগানগর বউবাজার এলাকা থেকে ৫০০ টাকায় একটি সুইচ গিয়ার চাকু কেনেন।

২১ অক্টোবর নিহতের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বংশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বলা হয়, জোবায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করাতেন। ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বংশাল এলাকার নুর বক্স লেনের একটি বাসায় পড়াতে যান। সেদিন সন্ধ্যায় বর্ষা জোবায়েদের ভাইকে মেসেঞ্জারে জানায়, “স্যারকে খুন করে ফেলেছে।”

খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে এনায়েত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সিঁড়ি ও দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পান এবং তৃতীয় তলায় গিয়ে জোবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ সিঁড়িতে উপুড় অবস্থায় দেখতে পান।