
খাগড়াছড়িতে সশস্ত্র উপজাতি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী ইউপিডিএফ এর সাম্প্রতিক অস্থিতিশীল ও সহিংস কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুনঃস্থাপন ও সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল, ০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও যুব পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, ইউপিডিএফ তাদের পুরনো নীলনকশা অনুযায়ী ধর্ষণের মিথ্যা অভিযোগকে কেন্দ্র করে অবরোধের নামে নিরীহ মানুষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা মসজিদে অগ্নিসংযোগ, দোকানপাট লুটপাট এবং সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দেওয়ার মতো জঘন্য অপতৎপরতা চালিয়ে পাহাড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। বক্তারা বলেন, মেডিকেল ও ডিএনএ রিপোর্টে অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, যা পাহাড়ের সামাজিক সম্প্রীতি ধ্বংসের এক গভীর চক্রান্ত।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের (পিসিএনপি) চেয়ারম্যান কাজী মজিবর রহমান। তাঁর বক্তৃতায় তিনি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেন,
”ভারতের আসাম, ত্রিপুরা ও মিয়ানমারের আরাকান আমাদের বাংলাদেশেরই অঙ্গরাজ্য ছিলো, সেহেতু আমাদের অঙ্গরাজ্য আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক এবং আমাদের লাগবে।”
পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, ভারতের কুখ্যাত গোয়েন্দা সংস্থা “র” সরাসরি এই ষড়যন্ত্রে জড়িত এবং তাদের নির্দেশেই ইউপিডিএফসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসীরা পাহাড়ে অশান্তি ছড়াচ্ছে। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় অবিলম্বে পাহাড়ে প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্পগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার জোর দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ ও যুব পরিষদের নেতারা তাদের বক্তব্যে ইউপিডিএফসহ সব সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার দাবি জানান। তারা বলেন, এসব সংগঠন রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছে এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিব্রত করার অপচেষ্টা করছে।
যুব পরিষদের সভাপতি এডভোকেট নূর হোসেন বলেন, রাষ্ট্রের ভিতরে আরেকটি রাষ্ট্র তৈরি করার নীলনকশা কোনোদিন সফল হতে দেওয়া হবে না। তিনি সম্প্রতি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় মসজিদে অগ্নিসংযোগের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়ানোর জঘন্য প্রচেষ্টা হিসেবে উল্লেখ করেন।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:
১. ইউপিডিএফসহ সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।
২. প্রত্যাহারকৃত সেনা ক্যাম্প পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে পাহাড়ে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. সাধারণ মানুষের উপর হামলা, লুটপাট, মসজিদে অগ্নিসংযোগ এবং ধর্ষণের মিথ্যা নাটক সাজানোদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
৪. পাহাড়ে বসবাসরত সকল মানুষের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর নজরদারি ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পাহাড়ের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না এবং ছাত্র পরিষদ ও যুব পরিষদ জনগণের সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে যুব পরিষদ এর কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা করা হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে এডভোকেট নূর হোসেন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এডভোকেট আফসার রনি ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মোঃ ইব্রাহিমকে ঘোষণা করেন যুব পরিষদ এর সমন্বয়ক এডভোকেট পারভেজ তালুকদার।