ঢাকা ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ আগুন, ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) একটি কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুন প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং বিজিবির সদস্যরাও।

সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির বলেন, আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে পুরোপুরি নিভেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

আগুন লাগে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ কারখানায়। প্রতিষ্ঠানটি তোয়ালে, ক্যাপ ও সার্জিক্যাল গাউন তৈরি করে। ভবনটি আটতলা বিশিষ্ট এবং এতে প্রায় ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। আগুনের সূত্রপাত ভবনের অষ্টম তলায়, যা দ্রুত সপ্তম ও ষষ্ঠ তলায় ছড়িয়ে পড়ে।

কারখানায় বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের চারপাশে দেখা গেছে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। আগুনের তীব্রতার কারণে আশপাশে অবস্থান করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। ভবনের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দেয়। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ভবন থেকে অন্তত ২০-২৫ জন শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও কেউ আটকে আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইপিজেড থানার ওসি মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন। গুরুতর আহত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

জি হং মেডিকেল কোম্পানির এক শ্রমিক মোছা. শিপা বলেন, আমি পাঁচতলায় কাজ করছিলাম। হঠাৎ শুনি আগুন আগুন চিৎকার। ওপর থেকে সবাই নামছে দেখে আমরাও দৌড়ে নিচে নেমে আসি।

শুরুর দিকেই সিইপিজেডে সেনাবাহিনীর একটি নিয়মিত দল ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নৌবাহিনীর চারটি ইউনিট ও এরপর বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরাও মোতায়েন ছিল।

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সুবাহান বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হতাহতের শঙ্কা নেই। আগুন নেভাতে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস একযোগে কাজ করছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতার কারণে ভেতরে ঢোকা খুবই কঠিন। পাঁচতলা পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। এখন ছয় ও সাততলার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, ভবনের চারপাশে পানি ছিটানো হলেও ভেতরের আগুন নেভানো কঠিন হচ্ছে। প্রচুর দাহ্য বস্তু থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। যতক্ষণ না পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণ নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

চট্টগ্রাম ইপিজেডে ভয়াবহ আগুন, ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে

আপডেট সময় : ০৩:২৬:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) একটি কারখানায় লাগা ভয়াবহ আগুন প্রায় ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ৭টা ২৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। তবে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ করতে আরও সময় লাগবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং বিজিবির সদস্যরাও।

সিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির বলেন, আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে পুরোপুরি নিভেনি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

আগুন লাগে বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে সিইপিজেডের ১ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর সড়কে অবস্থিত ‘অ্যাডামস ক্যাপ অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ কারখানায়। প্রতিষ্ঠানটি তোয়ালে, ক্যাপ ও সার্জিক্যাল গাউন তৈরি করে। ভবনটি আটতলা বিশিষ্ট এবং এতে প্রায় ৭০০ শ্রমিক কাজ করেন। আগুনের সূত্রপাত ভবনের অষ্টম তলায়, যা দ্রুত সপ্তম ও ষষ্ঠ তলায় ছড়িয়ে পড়ে।

কারখানায় বিপুল পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভবনের চারপাশে দেখা গেছে ঘন কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী। আগুনের তীব্রতার কারণে আশপাশে অবস্থান করাও কঠিন হয়ে পড়েছিল। ভবনের আশপাশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও দেখা দেয়। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। ভবন থেকে অন্তত ২০-২৫ জন শ্রমিককে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়েছে। আরও কেউ আটকে আছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

ইপিজেড থানার ওসি মোহাম্মদ জামির হোসেন জিয়া জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে শ্রমিকরা হুড়োহুড়ি করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসেন। গুরুতর আহত হওয়ার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি।

জি হং মেডিকেল কোম্পানির এক শ্রমিক মোছা. শিপা বলেন, আমি পাঁচতলায় কাজ করছিলাম। হঠাৎ শুনি আগুন আগুন চিৎকার। ওপর থেকে সবাই নামছে দেখে আমরাও দৌড়ে নিচে নেমে আসি।

শুরুর দিকেই সিইপিজেডে সেনাবাহিনীর একটি নিয়মিত দল ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করে। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নৌবাহিনীর চারটি ইউনিট ও এরপর বিমানবাহিনীর একটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয়। ঘটনাস্থলে পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরাও মোতায়েন ছিল।

সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সুবাহান বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিকদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হতাহতের শঙ্কা নেই। আগুন নেভাতে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস একযোগে কাজ করছে।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বিভাগের উপপরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম তলায় আগুন ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্রতার কারণে ভেতরে ঢোকা খুবই কঠিন। পাঁচতলা পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পেরেছি। এখন ছয় ও সাততলার আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, ভবনের চারপাশে পানি ছিটানো হলেও ভেতরের আগুন নেভানো কঠিন হচ্ছে। প্রচুর দাহ্য বস্তু থাকার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। যতক্ষণ না পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে, ততক্ষণ নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।