
জুলাই ২০২৪ সালে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমন নিয়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছেন তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর। সোমবার ছিল তার দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্য।
এদিন মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল অভিযুক্ত হাসানুল হক ইনুকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানিতে প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে অভিযোগের ওপর শুনানির জন্য এক সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী নাজনীন নাহার আরও দুদিন সময় চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল ১৪ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় ইনুর বিরুদ্ধে ৩৯ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মোট আটটি অভিযোগ আনা হয় এবং সাক্ষী হিসেবে ২০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ অভিযোগটি আমলে নেয়।
প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেন, ১৮ জুলাই ২০২৪-এ ভারতের মুম্বাইভিত্তিক গণমাধ্যম ‘মিরর নাউ’-তে হাসানুল হক ইনু আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগের উসকানি দেন। তার এই বক্তব্য থেকেই আন্দোলন দমনে সরকারকে মারণাস্ত্র ব্যবহারের পথে ঠেলে দেওয়া হয়।
১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গণভবনে অনুষ্ঠিত ১৪ দলীয় জোটের বৈঠকে ইনুর উপস্থিতিতে দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন এবং আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ইনু এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং নিজ জেলার পুলিশ সুপারকে আন্দোলনকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
তদন্তে উঠে আসে, শেখ হাসিনার সঙ্গে ইনুর সরাসরি যোগাযোগ ছিল এবং তিনি হেলিকপ্টার হামলা, আটক ও নির্যাতনের পরিকল্পনায় সহায়তা করেন। ২৭ জুলাই ইনু টেলিভিশনে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনকারীদের সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেন এবং কারফিউ ও বলপ্রয়োগের পক্ষে মত দেন।
২৯ জুলাই এবং ৪ আগস্টের সভাগুলোতেও ইনু একই ধরনের ভূমিকা পালন করেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে। ৫ আগস্ট কুষ্টিয়ায় ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে ছয়জন নিহত হন। এর মধ্যে রয়েছেন: আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী (বাবু), আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, মো. উসামা, বাবলু ফরাজী ও ইউসুফ শেখ।
পরবর্তীতে ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে ইনুকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন এবং একাধিক মামলায় অভিযুক্ত।