ঢাকা ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২

অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ ‘চামড়ায় ঘা’, রংপুরে সতর্কতা জারি

ছবি: সংগৃহীত

রংপুরের পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়নের ১২ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সরকারিভাবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তাদের মধ্যে ৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনের মধ্যে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

এর আগে,পশুবাহিত অজানা রোগে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধি দল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়নের উপসর্গযুক্ত ১২ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। একই সময় চারটি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশই অসুস্থ গরুর মাংস খাওয়া বা গবাদি পশুর সংস্পর্শে আসার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষাগারে গরুর মাংসের নমুনাতেও অ্যানথ্রাক্স ধরা পড়েছিল।

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন রোগীর তথ্য তাদের কাছে রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। অধিকাংশ রোগী অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে সাম্প্রতিক দুই মৃত্যুর কারণ সরাসরি অ্যানথ্রাক্স নয় বলে তিনি দাবি করেন।

চিকিৎসকদের মতে, আক্রান্ত গবাদি পশুর রক্ত, মাংস, শ্লেষ্মা বা নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শেই মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হতে পারে, তবে এটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় না। প্রধান লক্ষণ হলো চামড়ায় ঘা বা ক্ষত তৈরি হওয়া।

রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রুহুল আমিন জানান, পীরগাছার পাশাপাশি মিঠাপুকুর ও কাউনিয়াতেও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা গেছে। বর্তমানে আরও আটজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক মজুদ রয়েছে এবং রোগীদের সঠিক চিকিৎসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা দাবি করেছেন, গত দুই মাসে পীরগাছায় শতাধিক গবাদি পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জেলার প্রায় ১৩ লাখ গবাদি পশুর মধ্যে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার পশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির ও হাটবাজারে সচেতনতা কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই রোগ প্রতিরোধে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুকে নিয়মিত টিকা দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

অ্যানথ্রাক্সের লক্ষণ ‘চামড়ায় ঘা’, রংপুরে সতর্কতা জারি

আপডেট সময় : ১২:৪৬:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

রংপুরের পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়নের ১২ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সরকারিভাবে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) তাদের মধ্যে ৮ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত করেছে।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, নমুনা পরীক্ষায় ১২ জনের মধ্যে আটজনের শরীরে অ্যানথ্রাক্স শনাক্ত হয়েছে।

এর আগে,পশুবাহিত অজানা রোগে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশ পেয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ দপ্তর দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আইইডিসিআরের একটি প্রতিনিধি দল ১৩ ও ১৪ সেপ্টেম্বর পীরগাছা সদর ও পারুল ইউনিয়নের উপসর্গযুক্ত ১২ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে। পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ দপ্তরের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরাও সরেজমিন পরিদর্শন করেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই ও সেপ্টেম্বরে পীরগাছায় অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ নিয়ে দুজন মারা গেছেন। একই সময় চারটি ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক মানুষ অসুস্থ হয়েছেন। আক্রান্তদের অধিকাংশই অসুস্থ গরুর মাংস খাওয়া বা গবাদি পশুর সংস্পর্শে আসার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন। পরীক্ষাগারে গরুর মাংসের নমুনাতেও অ্যানথ্রাক্স ধরা পড়েছিল।

পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ তানভীর হাসনাত জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন রোগীর তথ্য তাদের কাছে রয়েছে, যাদের মধ্যে ৩০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। অধিকাংশ রোগী অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবে সাম্প্রতিক দুই মৃত্যুর কারণ সরাসরি অ্যানথ্রাক্স নয় বলে তিনি দাবি করেন।

চিকিৎসকদের মতে, আক্রান্ত গবাদি পশুর রক্ত, মাংস, শ্লেষ্মা বা নাড়িভুঁড়ির সংস্পর্শেই মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হতে পারে, তবে এটি মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় না। প্রধান লক্ষণ হলো চামড়ায় ঘা বা ক্ষত তৈরি হওয়া।

রংপুরের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. রুহুল আমিন জানান, পীরগাছার পাশাপাশি মিঠাপুকুর ও কাউনিয়াতেও অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা গেছে। বর্তমানে আরও আটজনের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিবায়োটিক মজুদ রয়েছে এবং রোগীদের সঠিক চিকিৎসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা দাবি করেছেন, গত দুই মাসে পীরগাছায় শতাধিক গবাদি পশু অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তবে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবু ছাইদ বলেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। জেলার প্রায় ১৩ লাখ গবাদি পশুর মধ্যে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৬৫ হাজার পশুকে অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধী টিকা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদ, মন্দির ও হাটবাজারে সচেতনতা কার্যক্রমও পরিচালিত হচ্ছে।

চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই রোগ প্রতিরোধে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুকে নিয়মিত টিকা দেওয়া সবচেয়ে কার্যকর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।