ঢাকা ০৫:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

গাজা চুক্তিতে স্বাক্ষর, যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক-কাতার-মিসর একমত

ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, ধ্বংস আর মানবিক বিপর্যয়ের পর অবশেষে শান্তির এক নতুন সূচনা হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গাজা শান্তি চুক্তির গ্যারান্টি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ক।

এই ঘোষণার মাধ্যমে দেশগুলো গাজা চুক্তির স্থায়িত্ব, বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিনটিকে তিনি আখ্যা দেন “মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক অসাধারণ দিন” হিসেবে। ট্রাম্প বলেন, আজ আমরা কেবল একটি চুক্তি করছি না, বরং ভবিষ্যতের জন্য শান্তির ভিত রচনায় এগিয়ে যাচ্ছি। বহু বছর যন্ত্রণা আর ধ্বংস সহ্য করা গাজার মানুষ অবশেষে শান্তির ছোঁয়া পাবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প জানান, এই গ্যারান্টি ঘোষণায় যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা, প্রশাসনিক কাঠামো গঠন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিস্তারিত নির্দেশনা থাকবে। তার ভাষায়, “এটি টিকে থাকবে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”

এর আগে গাজায় জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প এক আকস্মিক সফরে ইসরায়েল পৌঁছান। সেখানে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব, ধৈর্য ও কৌশলের প্রশংসা করেন। পরে সরাসরি সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মিসরে পৌঁছান।

ইসরায়েলি সংসদে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ইসরায়েল এমন এক যুদ্ধে জড়িয়েছিল, যার ভার শুধু একটি গর্বিত জাতিই বইতে পারে। এই ভূখণ্ডের মানুষ বহুদিন ধরে ভয়, ক্ষতি ও বেদনার মধ্যে কাটিয়েছে আজ তাদের সামনে শান্তির স্বপ্ন।

ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, এই চুক্তি শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, ফিলিস্তিনিদের জন্যও এক নতুন শুরু। গাজা, রামাল্লা, জেরুজালেম যেখানেই মানুষ আছে, সবাই যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। এই দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের অবসান আজ, বলেন তিনি।

চুক্তির আওতায় গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা, প্রশাসনিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো নতুন করে সহিংসতা প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।

দীর্ঘ সহিংসতা ও অস্থিরতার পর এই চুক্তি গাজার মানুষকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল একে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে এই শান্তি কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিকতা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ওপর

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামের বেটার্মিনাল এলাকা থেকে প্রকৌশল শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার

গাজা চুক্তিতে স্বাক্ষর, যুক্তরাষ্ট্র-তুরস্ক-কাতার-মিসর একমত

আপডেট সময় : ০৮:৪৫:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত, ধ্বংস আর মানবিক বিপর্যয়ের পর অবশেষে শান্তির এক নতুন সূচনা হলো ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায়। সোমবার (১৩ অক্টোবর) মিসরের পর্যটন শহর শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে গাজা শান্তি চুক্তির গ্যারান্টি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও তুরস্ক।

এই ঘোষণার মাধ্যমে দেশগুলো গাজা চুক্তির স্থায়িত্ব, বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দিনটিকে তিনি আখ্যা দেন “মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এক অসাধারণ দিন” হিসেবে। ট্রাম্প বলেন, আজ আমরা কেবল একটি চুক্তি করছি না, বরং ভবিষ্যতের জন্য শান্তির ভিত রচনায় এগিয়ে যাচ্ছি। বহু বছর যন্ত্রণা আর ধ্বংস সহ্য করা গাজার মানুষ অবশেষে শান্তির ছোঁয়া পাবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের আগে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প জানান, এই গ্যারান্টি ঘোষণায় যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা, প্রশাসনিক কাঠামো গঠন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিস্তারিত নির্দেশনা থাকবে। তার ভাষায়, “এটি টিকে থাকবে এটাই আমাদের অঙ্গীকার।”

এর আগে গাজায় জিম্মি ও বন্দি বিনিময়ের কয়েক ঘণ্টা পর ট্রাম্প এক আকস্মিক সফরে ইসরায়েল পৌঁছান। সেখানে ইসরায়েলি পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে তিনি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব, ধৈর্য ও কৌশলের প্রশংসা করেন। পরে সরাসরি সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি মিসরে পৌঁছান।

ইসরায়েলি সংসদে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ৭ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত ইসরায়েল এমন এক যুদ্ধে জড়িয়েছিল, যার ভার শুধু একটি গর্বিত জাতিই বইতে পারে। এই ভূখণ্ডের মানুষ বহুদিন ধরে ভয়, ক্ষতি ও বেদনার মধ্যে কাটিয়েছে আজ তাদের সামনে শান্তির স্বপ্ন।

ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, এই চুক্তি শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, ফিলিস্তিনিদের জন্যও এক নতুন শুরু। গাজা, রামাল্লা, জেরুজালেম যেখানেই মানুষ আছে, সবাই যেন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। এই দীর্ঘ দুঃস্বপ্নের অবসান আজ, বলেন তিনি।

চুক্তির আওতায় গাজায় যুদ্ধবিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন, চিকিৎসা ও মানবিক সহায়তা, প্রশাসনিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকল্পনা নেওয়া হবে। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো নতুন করে সহিংসতা প্রতিরোধ ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।

দীর্ঘ সহিংসতা ও অস্থিরতার পর এই চুক্তি গাজার মানুষকে নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহল একে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে এই শান্তি কতটা স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের আন্তরিকতা ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপের ওপর