ঢাকা ১২:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

সংসদ ভবনে জুলাই সনদ স্বাক্ষর, বিএনপি-জামায়াতসহ ২৪ দলের অংশগ্রহণ

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক আয়োজনে ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করেছে। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে মোট ২৫টি দল ও জোট অংশ নিলেও, এর মধ্যে ২৪টি দল ও জোটের পক্ষ থেকে ৪৮ জন নেতা সনদে সই করেছেন। একমাত্র জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সই থেকে বিরত ছিল।

এ সনদে সই করা ২৪টি দলের মধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দল এবং ২টি রাজনৈতিক জোট (১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট)। স্বাক্ষরকারী দলগুলোর মধ্যে ১৮টির নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আছে, বাকিগুলো নিবন্ধনবিহীন। জোটভুক্ত চারজন নেতার মধ্যে তিনজনই অনিবন্ধিত দলের প্রতিনিধি।

অংশ নেওয়া দলের তালিকা ও নেতারা হলো:

১. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) – রেদোয়ান আহমেদ ও নেয়ামূল বশির
২. খেলাফত মজলিস – আবদুল বাছিত আজাদ ও আহমদ আবদুল কাদের
৩. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন – হাসনাত কাইয়ূম ও সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন
৪. এবি পার্টি – মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
৫. নাগরিক ঐক্য – মাহমুদুর রহমান মান্না ও শহীদুল্লাহ কায়সার
৬. এনডিএম – ববি হাজ্জাজ ও মোমিনুল আমিন
৭. বিএনপি – মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সালাহউদ্দিন আহমদ
৮. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস – ইউসুফ আশরাফ ও জালালুদ্দীন আহমদ
৯. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী – সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও মিয়া গোলাম পরওয়ার
১০. গণসংহতি আন্দোলন – জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল
১১. জেএসডি – শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও তানিয়া রব
১২. গণ অধিকার পরিষদ – নুরুল হক নূর ও মো. রাশেদ খান
১৩. বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি – সাইফুল হক ও বহ্নিশিখা জামালী
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট – এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান
১৫. ১২-দলীয় জোট – মোস্তফা জামাল হায়দার ও শাহাদাত হোসেন সেলিম
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ – আশরাফ আলী আকন ও গাজী আতাউর রহমান
১৭. গণফোরাম – সুব্রত চৌধুরী ও মো. মিজানুর রহমান
১৮. জাকের পার্টি – শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও জহিরুল হাসান শেখ
১৯. জাতীয় গণফ্রন্ট – আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু
২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি – আবদুল মাজেদ আতহারী ও মুসা বিন ইযহার
২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টি – মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও খন্দকার মিরাজুল ইসলাম
২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টি – শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও মোহাম্মদ আবু ইউসুফ
২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ – আব্দুর রব ইউসুফী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
২৪. ইসলামী ঐক্যজোট – আব্দুল কাদের ও মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী
২৫. আমজনতার দল – কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও মো. তারেক রহমান

সোনদে সই না করা দলগুলো হলো: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) – আইনি ভিত্তির অভাবে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে এবং অনুষ্ঠানে যায়নি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। বাসদ (মার্ক্সবাদী)। বাংলাদেশ জাসদ। গণফোরাম – উপস্থিত থাকলেও সই করেনি; পরে আলোচনা সাপেক্ষে সই করতে পারে বলে জানিয়েছে। বাম দলগুলো সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, তাদের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো আমলে না নেওয়া, ইতিহাস বিকৃত উপস্থাপন ও সর্বসম্মত রূপরেখার অভাবের কারণে তারা সনদে সই করেনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে। দুই ধাপে কমিশন মোট ৬৩টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে। প্রথম দফায় ৩৩টি এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০টি দলের সঙ্গে সংলাপের পর ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হয়।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৫২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিকদেরকে এই আলোচনা ও সনদ থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। আয়োজকরা এসব দলকে ‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে আলোচনা থেকে দূরে রাখেন।

জুলাই সনদ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নতুন মোড় ঘোরানোর চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও এতে অংশগ্রহণকারী দলসংখ্যা উল্লেখযোগ্য, তবে সব দলের ঐকমত্য না থাকায় এবং গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর অনুপস্থিতিতে এর ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

সংসদ ভবনে জুলাই সনদ স্বাক্ষর, বিএনপি-জামায়াতসহ ২৪ দলের অংশগ্রহণ

আপডেট সময় : ১১:২৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত এক আয়োজনে ২৪টি রাজনৈতিক দল ও জোট ‘জুলাই সনদে’ স্বাক্ষর করেছে। এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এতে মোট ২৫টি দল ও জোট অংশ নিলেও, এর মধ্যে ২৪টি দল ও জোটের পক্ষ থেকে ৪৮ জন নেতা সনদে সই করেছেন। একমাত্র জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সই থেকে বিরত ছিল।

এ সনদে সই করা ২৪টি দলের মধ্যে ২২টি রাজনৈতিক দল এবং ২টি রাজনৈতিক জোট (১২-দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট)। স্বাক্ষরকারী দলগুলোর মধ্যে ১৮টির নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন আছে, বাকিগুলো নিবন্ধনবিহীন। জোটভুক্ত চারজন নেতার মধ্যে তিনজনই অনিবন্ধিত দলের প্রতিনিধি।

অংশ নেওয়া দলের তালিকা ও নেতারা হলো:

১. লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) – রেদোয়ান আহমেদ ও নেয়ামূল বশির
২. খেলাফত মজলিস – আবদুল বাছিত আজাদ ও আহমদ আবদুল কাদের
৩. রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন – হাসনাত কাইয়ূম ও সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন
৪. এবি পার্টি – মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
৫. নাগরিক ঐক্য – মাহমুদুর রহমান মান্না ও শহীদুল্লাহ কায়সার
৬. এনডিএম – ববি হাজ্জাজ ও মোমিনুল আমিন
৭. বিএনপি – মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সালাহউদ্দিন আহমদ
৮. বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস – ইউসুফ আশরাফ ও জালালুদ্দীন আহমদ
৯. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী – সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও মিয়া গোলাম পরওয়ার
১০. গণসংহতি আন্দোলন – জোনায়েদ সাকি ও আবুল হাসান রুবেল
১১. জেএসডি – শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও তানিয়া রব
১২. গণ অধিকার পরিষদ – নুরুল হক নূর ও মো. রাশেদ খান
১৩. বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি – সাইফুল হক ও বহ্নিশিখা জামালী
১৪. জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট – এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান
১৫. ১২-দলীয় জোট – মোস্তফা জামাল হায়দার ও শাহাদাত হোসেন সেলিম
১৬. ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ – আশরাফ আলী আকন ও গাজী আতাউর রহমান
১৭. গণফোরাম – সুব্রত চৌধুরী ও মো. মিজানুর রহমান
১৮. জাকের পার্টি – শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও জহিরুল হাসান শেখ
১৯. জাতীয় গণফ্রন্ট – আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু
২০. বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি – আবদুল মাজেদ আতহারী ও মুসা বিন ইযহার
২১. বাংলাদেশ লেবার পার্টি – মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও খন্দকার মিরাজুল ইসলাম
২২. ভাসানী জনশক্তি পার্টি – শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু ও মোহাম্মদ আবু ইউসুফ
২৩. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ – আব্দুর রব ইউসুফী ও মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
২৪. ইসলামী ঐক্যজোট – আব্দুল কাদের ও মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী
২৫. আমজনতার দল – কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও মো. তারেক রহমান

সোনদে সই না করা দলগুলো হলো: জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) – আইনি ভিত্তির অভাবে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে এবং অনুষ্ঠানে যায়নি। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। বাসদ (মার্ক্সবাদী)। বাংলাদেশ জাসদ। গণফোরাম – উপস্থিত থাকলেও সই করেনি; পরে আলোচনা সাপেক্ষে সই করতে পারে বলে জানিয়েছে। বাম দলগুলো সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, তাদের সংশোধনী প্রস্তাবগুলো আমলে না নেওয়া, ইতিহাস বিকৃত উপস্থাপন ও সর্বসম্মত রূপরেখার অভাবের কারণে তারা সনদে সই করেনি।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু করে। দুই ধাপে কমিশন মোট ৬৩টি দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে। প্রথম দফায় ৩৩টি এবং দ্বিতীয় দফায় ৩০টি দলের সঙ্গে সংলাপের পর ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করা হয়।

বর্তমানে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৫২টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের শরিকদেরকে এই আলোচনা ও সনদ থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। আয়োজকরা এসব দলকে ‘ফ্যাসিবাদের সহযোগী’ আখ্যা দিয়ে আলোচনা থেকে দূরে রাখেন।

জুলাই সনদ বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি নতুন মোড় ঘোরানোর চেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। যদিও এতে অংশগ্রহণকারী দলসংখ্যা উল্লেখযোগ্য, তবে সব দলের ঐকমত্য না থাকায় এবং গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর অনুপস্থিতিতে এর ভবিষ্যৎ প্রভাব নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়ে গেছে।