ঢাকা ০৬:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

বাংলাদেশে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা

লেখক: আনিকা তামান্না

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকা,বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও মিরপুর সহ কয়েকটি জায়গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।মিরপুরের গার্মেন্টস কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ আগুনে বহু প্রাণহানি হয়েছে।পরপরই দেখা যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন ও ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ। টানা এসব ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এগুলো কি কেবল দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে আছে নাশকতার ছক?

তদন্ত চলছে বলে জানানো হলেও মানুষের মনে শঙ্কা ও অবিশ্বাস বাড়ছে প্রতিদিন।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
মিরপুর গার্মেন্টস কারখানা অগ্নিকাণ্ড:১৪ অক্টোবর ২০২৫ ঢাকার মিরপুর এলাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও পাশের রাসায়নিক গুদামে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।এতে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয় এবং কর্মী আহত।

চট্টগ্রাম ইপিজেট অগ্নিকাণ্ড: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (CEPZ) Adams cap and textile Ltd ফ্যাক্টরিতে আগুনে ভবনের ক্ষতি হলেও কর্মীদের সকলে নিরাপদে বের হতে পারে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ অগ্নিকাণ্ড: ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ঢাকার বিমানবন্দরে আগুনে ফ্লাইট কার্যক্রম কয়েকঘন্টা বন্ধ হয় এবং কার্গো গুদামের বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়।

দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ :
অফিসিয়াল তদন্ত ও প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপন ব্যবস্থার ঘাটতি অবৈধ রাসায়নিক সংরক্ষণ এবং বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হতে পারে।এসব অগ্নিকাণ্ডের কারণ বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে এধরনের অনিয়ম নতুন নয়।নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ার এধরনের দুর্ঘটনা প্রায় ঘটে থাকে।

পরিকল্পিত নাশকতার সন্দেহ:
বিগত কয়েকদিনের এমন ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে সন্দেহ।হওয়াটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। দেশকে অস্থিতিশীল এবং বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় অচলতা তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগ টানার সবচেয়ে সহজ উপায় এসব জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটানো। দেশে এমন বড় বড় শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদিতে আগুন লাগলে দেশ অচল ভাব তৈরি হয় যা ষড়যন্ত্রের আদর্শ প্যাটার্ন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা যায় কেবল দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে গেলে সমস্যার সমাধান হবে না।সুস্পষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন কিংবা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকলেও তা অতি স্বত্তর পরিবর্তন প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ যেমন (২০১৩ রানা প্লাজা। ২০২১ নারায়ণগঞ্জ ফ্যাক্টরি ফায়ার থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়নি।।

বাংলাদেশে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড শুধু প্রাণহানি ঘটাচ্ছে না, জনমনে গভীর আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তাও তৈরি করছে। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত, কার্যকর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সন্দেহজনক দিকগুলোও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা। নাহলে প্রতিবারের মতো শোকের আবহই হয়তো থেকে যাবে, পরিবর্তন আসবে না।

লেখক: আনিকা তামান্না
শিক্ষার্থী: পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

চট্টগ্রামের বেটার্মিনাল এলাকা থেকে প্রকৌশল শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার

বাংলাদেশে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা

আপডেট সময় : ০১:২৮:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫

সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানী ঢাকা,বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও মিরপুর সহ কয়েকটি জায়গায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।মিরপুরের গার্মেন্টস কারখানা ও রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ আগুনে বহু প্রাণহানি হয়েছে।পরপরই দেখা যায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন ও ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ। টানা এসব ঘটনায় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে এগুলো কি কেবল দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে আছে নাশকতার ছক?

তদন্ত চলছে বলে জানানো হলেও মানুষের মনে শঙ্কা ও অবিশ্বাস বাড়ছে প্রতিদিন।

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
মিরপুর গার্মেন্টস কারখানা অগ্নিকাণ্ড:১৪ অক্টোবর ২০২৫ ঢাকার মিরপুর এলাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ও পাশের রাসায়নিক গুদামে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।এতে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয় এবং কর্মী আহত।

চট্টগ্রাম ইপিজেট অগ্নিকাণ্ড: ১৬ অক্টোবর ২০২৫ চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (CEPZ) Adams cap and textile Ltd ফ্যাক্টরিতে আগুনে ভবনের ক্ষতি হলেও কর্মীদের সকলে নিরাপদে বের হতে পারে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ অগ্নিকাণ্ড: ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ঢাকার বিমানবন্দরে আগুনে ফ্লাইট কার্যক্রম কয়েকঘন্টা বন্ধ হয় এবং কার্গো গুদামের বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়।

দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ :
অফিসিয়াল তদন্ত ও প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে অগ্নিকাণ্ড নির্বাপন ব্যবস্থার ঘাটতি অবৈধ রাসায়নিক সংরক্ষণ এবং বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হতে পারে।এসব অগ্নিকাণ্ডের কারণ বাংলাদেশের শিল্পক্ষেত্রে এধরনের অনিয়ম নতুন নয়।নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী না হওয়ার এধরনের দুর্ঘটনা প্রায় ঘটে থাকে।

পরিকল্পিত নাশকতার সন্দেহ:
বিগত কয়েকদিনের এমন ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে সন্দেহ।হওয়াটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। দেশকে অস্থিতিশীল এবং বাণিজ্যিক ব্যবস্থায় অচলতা তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক মনোযোগ টানার সবচেয়ে সহজ উপায় এসব জায়গায় অগ্নিকাণ্ড ঘটানো। দেশে এমন বড় বড় শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদিতে আগুন লাগলে দেশ অচল ভাব তৈরি হয় যা ষড়যন্ত্রের আদর্শ প্যাটার্ন দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণে বলা যায় কেবল দুর্ঘটনা বলে এড়িয়ে গেলে সমস্যার সমাধান হবে না।সুস্পষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র রুখতে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন কিংবা নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি থাকলেও তা অতি স্বত্তর পরিবর্তন প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ যেমন (২০১৩ রানা প্লাজা। ২০২১ নারায়ণগঞ্জ ফ্যাক্টরি ফায়ার থেকে শিক্ষা নেওয়া হয়নি।।

বাংলাদেশে ধারাবাহিক অগ্নিকাণ্ড শুধু প্রাণহানি ঘটাচ্ছে না, জনমনে গভীর আতঙ্ক ও অনিশ্চয়তাও তৈরি করছে। এখন সবচেয়ে জরুরি হলো নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত, কার্যকর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং সন্দেহজনক দিকগুলোও গভীরভাবে খতিয়ে দেখা। নাহলে প্রতিবারের মতো শোকের আবহই হয়তো থেকে যাবে, পরিবর্তন আসবে না।

লেখক: আনিকা তামান্না
শিক্ষার্থী: পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি