
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে ৮ বছরের এক কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৭০ বছরের বৃদ্ধ এক স্ক্রাপ ব্যবসায়ীকে শারীরিক নির্যাতন ও পুলিশের উপস্থিতিতে আর্থিক জরিমানার ঘটনা ঘটেছে। নেয়া হয়নি আইনি পদক্ষেপ চিকিৎসা কিংবা ডাক্তারি পরীক্ষা হয়নি ধর্ষণের শিকার শিশু কন্যার।
শুক্রবার ( ৩ অক্টোবর) বিকালে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড আমানটোলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ʻঘটনার বিবরণে জানা যায়, খাগড়াছড়ি এলাকার মকবুল হোসেন দীর্ঘ ৯ বছর ধরে আমানটোলা এলাকায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কেয়ারটেকার হিসেবে কাজের পাশাপাশি স্ক্রাপ ব্যবসায় করেন। গত এক বছর ধরে স্থানীয় আনোয়ার হোসেনের পরিবারের সাথে তার সখ্যতা তৈরি হয়। আনোয়ারের স্ত্রী ও স্ত্রীর বোন মকবুল হোসেন কে বাবা বলে ডাকেন। মকবুল হোসেনের আপন দুই মেয়ের পাশাপাশি তাদেরকেও মেয়ের মতোই আদর আত্তি করেন।
মকবুল হোসেনের স্ত্রী না থাকায় আনোয়ারের শাশুড়ির সাথে মকবুল হোসেনের বিয়ের চিন্তা ভাবনা ও তৈরি হয়। স্থানীয়দের মতে আনোয়ারের শাশুড়ি ও মকবুল হোসেনের সাথে আন্তরিকতা কিংবা অন্তরআলে ভিন্ন যোগাযোগ ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক মকবুল হোসেনের বাড়ির মালিকের জন্য কিছু জমি ক্রয় কে কেন্দ্র করে মকবুলের সাথে আনোয়ারের শাশুড়ি ও তার স্ত্রীর সাথে মনোমালিন্য তৈরি হয়। সেই মনোমালিন্য কে কেন্দ্র করে আনোয়ারের শাশুড়ি মকবুল কে দেখে নেয়ার ও এলাকা ছাড়া করার হুমকি দেন।
গত বুধবার আনোয়ার অভিযোগ করেন তার ৮ বছরের শিশু কন্যাকে দরজা বেধে ধর্ষণ করেছেন মকবুল হোসেন। কিন্তু আনোয়ার তার শিশু কে চিকিৎসা না করিয়ে আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে তার নেতৃত্বে স্থানীয় রাজনৈতিক সমর্থক ২৫ থেকে ৩০ জন একত্রিত হয়ে মকবুল হোসেন কে কয়েক দফায় মারধর ও শারীরিক নির্যাতন করেন। শারীরিক নির্যাতন করে মকবুল হোসেনের কাছে ৩ লাখ টাকা ক্ষতি পুরণ দাবি করা করেন। কিন্তু মকবুল হোসেন কোন প্রকার ক্ষতি পুরণ দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
ফলে দুই দিন পর শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর মিরসরাই থানা পুলিশের এসআই জিহাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ৩ টি নন জুড়িশিয়াল স্টাম্প ও একটি সাদা কাগজে মুছলিখা নিয়ে মকবুল হোসেন কে শিশু ধর্ষণের অপরাধে পৃথক কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া উপস্থিত শিশুর চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা নগদ আদায় করা হয়। পাশাপাশি চিকিৎসার প্রয়োজনে আরো টাকা লাগলে দিতে হবে মর্মে মকবুল হোসেন কে জানানো হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় চিকিৎসা কিংবা থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আনোয়ার, তার স্ত্রী ও তাদের ঘরে থাকা উঠতি বয়সের বেশ কয়েকজন যুবক বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে বলে এডিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কি সমাধান হয়েছে জানতে চাইলে আনোয়ারের স্ত্রী বলেন, যে দোষ করছে তাকে আমরা শাস্তি দিয়েছি আপনারা চলে যান। কথায় কথায় তিনি বলেন, তাকে আমরা ভালো জানতাম বাপ ডাকতাম। কিন্তু সে আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। দুই মাস আগে একবার ধর্ষণের কারনে শিশুর গোপনাঙ্গে ব্যাথা হয়েছিল তখন আমরা একটি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা করেছি।এখন সে আবার আমার মেয়েকে ধর্ষণ করেছে।এবারের ঘটনায় আমরা প্রথমে বড় ভাইদের মাধ্যমে তার বিচার করছি । কিন্তু সেই বিচার মানে নাই বলে থানা থেকে পুলিশ এনে তাকে শাস্তি দিয়েছি। এখন আমার মেয়ের চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসার জন্য আমাদের টাকার প্রয়োজন। টাকা পেলেই মেয়ের চিকিৎসা করাবো।
অভিযুক্ত মকবুল হোসেন বলেন, তাদের সাথে এক বছরের সখ্যতা। একটি জমি ক্রয় কে কেন্দ্র করে তারা মনে করছে আমার কাছে অনেক টাকা আছে। তাই তারা মিথ্যা অভিযোগ এনে আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করার ফন্দি করেছে। আমি কোন টাকা দিতে পারবোনা। আমি কোন অপরাধ করলে আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হোক। এতে আমার কোন আপত্তি নেই।
শিশু ধর্ষণের অভিযুক্তকে আইনের অওতায় না এনে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও নগদ ৫ হাজার টাকা চিকিৎসার খরচ আদায়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার এসআই জিহাদুজ্জামান বলেন এই ধরণের কোন ঘটনা ঘটে নাই। শিশু সাথে খারাপ আচরণের একটি অভিযোগ ছিল আমরা বলেছি তাদেরকে থানায় অভিযোগ দিতে। এর বাইরে আর কিছু জানিনা।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান জানান, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর ফাতেহা উপলক্ষে ৩ দিনের ছুটিতে রয়েছেন। ফিরে এসেই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।