ঢাকা ০৪:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন ঢাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা, নির্বাচনী মনোনয়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়নি, দলের অভ্যন্তরে ইতিমধ্যেই নিবিড় প্রস্তুতি চলছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তিনি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের ফোন কলের মাধ্যমে নির্ধারিত হচ্ছে কারা পাবেন বিএনপির ‘গ্রিন সিগন্যাল’ এবং কারা নির্বাচনী দৌড় থেকে বাদ পড়বেন। বর্তমানে দলের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজে প্রতিটি আসনে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সাংগঠনিক সক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করছেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় পূর্ণ উদ্যমে নামার নির্দেশনা দিয়েছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারেক রহমান শুধু অনুমোদন দিচ্ছেন না, বরং প্রতিটি প্রার্থীর মাঠ কার্যক্রম, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া যাচাই করছেন। বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে তরুণ, পেশাজীবী এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচিত মুখদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, ঢাকা-৩: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৪: তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬: ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৮: মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১০: ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা-১২: হাবিব উন খান নবী সোহেল, ঢাকা-১৩: ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৫: মামুন হাসান, ঢাকা-১৬: আমিনুল হক, ঢাকা-১৪: সানজিদা ইসলাম তুলি (মায়ের ডাক আন্দোলনের সমন্বয়কারী)

রাজধানীর এই তালিকা নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে সামনে আনার দিকেও ইঙ্গিত বহন করছে। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন আসনে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া নেতারা ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

সারা দেশে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা তৈরি হচ্ছে। বিএনপির হাইকমান্ড জানিয়েছে, অন্তত ৬০টি আসনে প্রার্থী নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। এসব আসনে দলের শীর্ষস্থানীয় ও পরীক্ষিত নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা ‘নিরাপদ আসন’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আছেন—ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১), ড. আব্দুল মঈন খান (নরসিংদী-২), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), মো. শাহজাহান (নোয়াখালী-৪), শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর-৩), মিয়া নুরুউদ্দিন অপু (শরীয়তপুর-৩) প্রমুখ।

মনোনয়ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দলের হাইকমান্ড জোট ও শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন বিষয়ে আলোচনায় রয়েছে। এটি দলকে নির্বাচনী ক্ষেত্রে নমনীয়তা এবং বিচক্ষণতা প্রদর্শনের সুযোগ দিচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “যারা এলাকায় সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয়, তারাই এবার মনোনয়ন পাবেন। প্রতিটি আসনের প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”

দলের হাইকমান্ড স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, যাকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে, সবাইকে তার পাশে কাজ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিরোধ বা বিভক্তি সহ্য করা হবে না। এই পদক্ষেপ দলের ঐক্য সুসংহত করতে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে মনোনয়ন প্রক্রিয়া দলের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নেতৃত্বের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি দলকে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে আরও দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে দিচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করছে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

আরব আমিরাতে হাটহাজারী সমিতির আল আইন আঞ্চলিক কমিটি নতুনভাবে ঘোষণা

গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন ঢাকার সম্ভাব্য প্রার্থীরা, নির্বাচনী মনোনয়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে

আপডেট সময় : ১২:৫১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে অবস্থান করছে। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হয়নি, দলের অভ্যন্তরে ইতিমধ্যেই নিবিড় প্রস্তুতি চলছে, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তিনি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া।

দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের ফোন কলের মাধ্যমে নির্ধারিত হচ্ছে কারা পাবেন বিএনপির ‘গ্রিন সিগন্যাল’ এবং কারা নির্বাচনী দৌড় থেকে বাদ পড়বেন। বর্তমানে দলের মনোনয়ন যাচাই-বাছাই চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজে প্রতিটি আসনে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সাংগঠনিক সক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করছেন। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় পূর্ণ উদ্যমে নামার নির্দেশনা দিয়েছেন।

দলীয় সূত্র বলছে, এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় ভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে। তারেক রহমান শুধু অনুমোদন দিচ্ছেন না, বরং প্রতিটি প্রার্থীর মাঠ কার্যক্রম, তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া যাচাই করছেন। বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গেছে, ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে তরুণ, পেশাজীবী এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচিত মুখদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, ঢাকা-৩: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৪: তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬: ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৮: মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১০: ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা-১২: হাবিব উন খান নবী সোহেল, ঢাকা-১৩: ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৫: মামুন হাসান, ঢাকা-১৬: আমিনুল হক, ঢাকা-১৪: সানজিদা ইসলাম তুলি (মায়ের ডাক আন্দোলনের সমন্বয়কারী)

রাজধানীর এই তালিকা নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বকে সামনে আনার দিকেও ইঙ্গিত বহন করছে। এছাড়া ঢাকার বিভিন্ন আসনে গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া নেতারা ইতিমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণার প্রস্তুতি শুরু করেছেন।

সারা দেশে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা তৈরি হচ্ছে। বিএনপির হাইকমান্ড জানিয়েছে, অন্তত ৬০টি আসনে প্রার্থী নিয়ে কোনো মতবিরোধ নেই। এসব আসনে দলের শীর্ষস্থানীয় ও পরীক্ষিত নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যা ‘নিরাপদ আসন’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মধ্যে আছেন—ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১), ড. আব্দুল মঈন খান (নরসিংদী-২), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), মো. শাহজাহান (নোয়াখালী-৪), শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর-৩), মিয়া নুরুউদ্দিন অপু (শরীয়তপুর-৩) প্রমুখ।

মনোনয়ন প্রক্রিয়ার পাশাপাশি দলের হাইকমান্ড জোট ও শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন বিষয়ে আলোচনায় রয়েছে। এটি দলকে নির্বাচনী ক্ষেত্রে নমনীয়তা এবং বিচক্ষণতা প্রদর্শনের সুযোগ দিচ্ছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “যারা এলাকায় সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয়, তারাই এবার মনোনয়ন পাবেন। প্রতিটি আসনের প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে।”

দলের হাইকমান্ড স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, যাকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে, সবাইকে তার পাশে কাজ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ বিরোধ বা বিভক্তি সহ্য করা হবে না। এই পদক্ষেপ দলের ঐক্য সুসংহত করতে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি আরও শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে মনোনয়ন প্রক্রিয়া দলের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং নেতৃত্বের মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি দলকে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে আরও দৃঢ় অবস্থানে পৌঁছে দিচ্ছে এবং নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করছে।