ঢাকা ০৯:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭ কার্তিক ১৪৩২

ন্যু কাম্পে আতঙ্ক: পেদ্রির চোট আবারও বার্সার দুশ্চিন্তা

বার্সেলোনার ভেতরে এখন যেন জরুরি অবস্থা। ক্লাবের ভাষায় ‘ডেফকন-১’। কারণ দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার পেদ্রি আবারও ইনজুরিতে পড়েছেন। নতুন চোটের কারণে অন্তত দেড় মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। তবে এই ইনজুরি শুধু এক ফুটবলারের দুঃখ নয় এটি পুরো ক্লাবকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে।

গত এক দশকে বার্সেলোনা যত ঘন ঘন ইনজুরি সংকট মোকাবিলা করেছে, তবু পেদ্রির চোট যেন নতুন এক ভূমিকম্পের মতো। এখন ক্লাবের ভিতরে চলছে দায়-দায়িত্বের খোঁজ। প্রশ্ন উঠেছে কোথায় হচ্ছে ভুল? কেন প্রতিবারই একই চিত্র প্রতিভা ঝলমলে, কিন্তু শরীর মৌসুমের মাঝপথে ভেঙে যাচ্ছে?

শারীরিক প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা দুইজন জুলিও তুস (ফিজিক্যাল কন্ডিশনিং প্রধান) ও রাউল মার্তিনেজ (ফিজিওথেরাপি প্রধান) এখন আছেন ঝড়ের কেন্দ্রে। তারা আসেন হান্সি ফ্লিকের সময়, এবং তখন ক্লাবের প্রত্যাশা ছিল খেলোয়াড়দের ফিটনেসে বিপ্লব আনা ও ইনজুরি কমানো।

প্রথম মৌসুমে কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। ফ্লিকের অধীনে বার্সেলোনা প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ইনজুরি কমেনি বরং লা লিগায় সর্বাধিক ইনজুরির তালিকায় ছিল তারা। পরিসংখ্যান বলছে, গত মৌসুমে বার্সার ইনজুরির সংখ্যা ছিল ২০, রিয়াল মাদ্রিদের ১৮।

পেদ্রির মতো খেলোয়াড়রা সুস্থ থাকায় আশাবাদ দেখা দিয়েছিল। তুসের নতুন ‘স্ট্র্যাপ-ট্রেনিং’ পদ্ধতি যেখানে ওজনের বদলে বিশেষ ব্যান্ড ব্যবহার করা হয় খেলোয়াড়দের পেশিশক্তি বাড়িয়েছে এবং ইনজুরি কমিয়েছে। ক্লাব এটিকে সাফল্যের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় মৌসুমে পরিস্থিতি উল্টো হয়ে গেছে। দলের ফিটনেস কমেছে, ইনজুরির সংখ্যা বেড়েছে, এবং পেদ্রির নতুন চোট এখন সেই সমস্যার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। লামিনে ইয়ামাল, গাভি, রাফিনিয়া এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তারকাই ইনজুরিতে আছেন, যাদের অনেকেই সেরে ওঠার ঠিক পরেই আবার চোট পেয়েছেন।

দলের প্রধান চিকিৎসক রিকার্ড প্রুনার কাঁধেও চাপ বাড়ছে। একের পর এক নাম যোগ হচ্ছে ইনজুরি তালিকায়, এবং ক্লাবের ভিতরে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। বোর্ড সদস্যরাও প্রশ্ন তুলছেন ফিজিক্যাল ম্যানেজমেন্টে কি ত্রুটি হচ্ছে?

এক অভিজ্ঞ বার্সা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্প্যানিশ দৈনিক এস জানায়, “আমরা ভেবেছিলাম ফ্লিক যুগে ইনজুরির গল্প শেষ হবে। এখন মনে হচ্ছে, গল্পটা নতুন অধ্যায়ে ঢুকেছে আরও ভয়ঙ্কর এক অধ্যায়ে।”

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের তুলনা করা হচ্ছে ন্যু কাম্প যেন পেন্টাগনের কক্ষে ‘ডেফকন-১’, সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা, যখন সংঘর্ষ বাস্তব ও অবশ্যম্ভাবী।

এখন ন্যু কাম্পে নীরব আতঙ্ক। প্রশ্ন একটাই বার্সেলোনা কি আবারও নিজেদের শরীরের কারণে হারতে বসেছে?

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ন্যু কাম্পে আতঙ্ক: পেদ্রির চোট আবারও বার্সার দুশ্চিন্তা

আপডেট সময় : ০৪:৩২:৫৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

বার্সেলোনার ভেতরে এখন যেন জরুরি অবস্থা। ক্লাবের ভাষায় ‘ডেফকন-১’। কারণ দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার পেদ্রি আবারও ইনজুরিতে পড়েছেন। নতুন চোটের কারণে অন্তত দেড় মাস মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাকে। তবে এই ইনজুরি শুধু এক ফুটবলারের দুঃখ নয় এটি পুরো ক্লাবকেই কাঁপিয়ে দিয়েছে।

গত এক দশকে বার্সেলোনা যত ঘন ঘন ইনজুরি সংকট মোকাবিলা করেছে, তবু পেদ্রির চোট যেন নতুন এক ভূমিকম্পের মতো। এখন ক্লাবের ভিতরে চলছে দায়-দায়িত্বের খোঁজ। প্রশ্ন উঠেছে কোথায় হচ্ছে ভুল? কেন প্রতিবারই একই চিত্র প্রতিভা ঝলমলে, কিন্তু শরীর মৌসুমের মাঝপথে ভেঙে যাচ্ছে?

শারীরিক প্রস্তুতির দায়িত্বে থাকা দুইজন জুলিও তুস (ফিজিক্যাল কন্ডিশনিং প্রধান) ও রাউল মার্তিনেজ (ফিজিওথেরাপি প্রধান) এখন আছেন ঝড়ের কেন্দ্রে। তারা আসেন হান্সি ফ্লিকের সময়, এবং তখন ক্লাবের প্রত্যাশা ছিল খেলোয়াড়দের ফিটনেসে বিপ্লব আনা ও ইনজুরি কমানো।

প্রথম মৌসুমে কিছুটা আশার আলো দেখা গিয়েছিল। ফ্লিকের অধীনে বার্সেলোনা প্রাণবন্ত ও শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ইনজুরি কমেনি বরং লা লিগায় সর্বাধিক ইনজুরির তালিকায় ছিল তারা। পরিসংখ্যান বলছে, গত মৌসুমে বার্সার ইনজুরির সংখ্যা ছিল ২০, রিয়াল মাদ্রিদের ১৮।

পেদ্রির মতো খেলোয়াড়রা সুস্থ থাকায় আশাবাদ দেখা দিয়েছিল। তুসের নতুন ‘স্ট্র্যাপ-ট্রেনিং’ পদ্ধতি যেখানে ওজনের বদলে বিশেষ ব্যান্ড ব্যবহার করা হয় খেলোয়াড়দের পেশিশক্তি বাড়িয়েছে এবং ইনজুরি কমিয়েছে। ক্লাব এটিকে সাফল্যের মডেল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল।

কিন্তু দ্বিতীয় মৌসুমে পরিস্থিতি উল্টো হয়ে গেছে। দলের ফিটনেস কমেছে, ইনজুরির সংখ্যা বেড়েছে, এবং পেদ্রির নতুন চোট এখন সেই সমস্যার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। লামিনে ইয়ামাল, গাভি, রাফিনিয়া এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তারকাই ইনজুরিতে আছেন, যাদের অনেকেই সেরে ওঠার ঠিক পরেই আবার চোট পেয়েছেন।

দলের প্রধান চিকিৎসক রিকার্ড প্রুনার কাঁধেও চাপ বাড়ছে। একের পর এক নাম যোগ হচ্ছে ইনজুরি তালিকায়, এবং ক্লাবের ভিতরে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে। বোর্ড সদস্যরাও প্রশ্ন তুলছেন ফিজিক্যাল ম্যানেজমেন্টে কি ত্রুটি হচ্ছে?

এক অভিজ্ঞ বার্সা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে স্প্যানিশ দৈনিক এস জানায়, “আমরা ভেবেছিলাম ফ্লিক যুগে ইনজুরির গল্প শেষ হবে। এখন মনে হচ্ছে, গল্পটা নতুন অধ্যায়ে ঢুকেছে আরও ভয়ঙ্কর এক অধ্যায়ে।”

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের তুলনা করা হচ্ছে ন্যু কাম্প যেন পেন্টাগনের কক্ষে ‘ডেফকন-১’, সর্বোচ্চ সতর্কবার্তা, যখন সংঘর্ষ বাস্তব ও অবশ্যম্ভাবী।

এখন ন্যু কাম্পে নীরব আতঙ্ক। প্রশ্ন একটাই বার্সেলোনা কি আবারও নিজেদের শরীরের কারণে হারতে বসেছে?