ঢাকা ১২:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন নয়, স্পষ্ট লেখা চায় আদালত

‍ছবি : সংগৃহীত

চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে কৌতুক আর সমালোচনার শেষ নেই। অনেকেই বলেন, তাদের লেখা বুঝতে পারেন কেবলমাত্র ওষুধের দোকানের কর্মীরাই। শুধু ভারতে নয়, এই ধারা বিশ্বের নানা দেশেই পরিচিত একটি হাস্যরসের বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টি এবার গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় এসেছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে।

সম্প্রতি আদালত একটি মামলার শুনানিতে মন্তব্য করেছে, “সহজে পাঠযোগ্য ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, অস্পষ্ট লেখা অনেক সময় জীবন ও মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”

এটি এমন এক মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, যার মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্ষণ, প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ। মামলায় অভিযোগকারী এক নারী দাবি করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে সরকারি চাকরির লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন, ভুয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং যৌন নির্যাতন করেছেন। অপরদিকে, অভিযুক্ত তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের মধ্যে সম্মতিসূচক সম্পর্ক ছিল এবং মূলত টাকার বিরোধ থেকেই এই মামলা হয়েছে।

এই মামলায় বিচারপতি জসগুরুপ্রীত সিং পুরি যখন ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন খতিয়ে দেখেন, তখন তিনি চমকে ওঠেন প্রতিবেদনটি এতটাই দুর্বোধ্য যে একটি শব্দও স্পষ্টভাবে পড়া যাচ্ছিল না।

আদালতের আদেশে বিচারপতি লিখেছেন, “এই লেখাটি আদালতের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। কারণ, এটি এতটাই অস্পষ্ট ছিল যে বোঝা দুষ্কর। একটি শব্দও ঠিকমতো পড়া যাচ্ছিল না।”

বিবিসি এই রায়ের একটি কপি পর্যালোচনা করেছে, যেখানে আদালতে দাখিলকৃত সেই ডাক্তারি প্রতিবেদন এবং একটি দুই পৃষ্ঠার ব্যবস্থাপত্র যুক্ত ছিল। সেখানে ডাক্তারের লেখা হিজিবিজি এবং অস্পষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়।

বিচারপতি আরও মন্তব্য করেন, “যখন প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার এত সহজলভ্য, তখনো কেন সরকারি চিকিৎসকেরা এমন হাতের লেখা ব্যবহার করছেন, যা শুধু ওষুধের দোকানের কর্মীরাই বুঝতে পারেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

এই প্রেক্ষাপটে আদালত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে মেডিকেল কলেজগুলোর পাঠ্যক্রমে হাতের লেখার (হ্যান্ডরাইটিং) প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যবস্থাপত্র ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ততদিন পর্যন্ত সব ডাক্তারকে স্পষ্টভাবে বড় হাতের অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে।

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (IMA) প্রেসিডেন্ট ড. দিলীপ ভানুশালী বলেছেন, তারা এই সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি জানান, সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

দুর্বোধ্য প্রেসক্রিপশন নয়, স্পষ্ট লেখা চায় আদালত

আপডেট সময় : ০৬:২৬:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ অক্টোবর ২০২৫

চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে কৌতুক আর সমালোচনার শেষ নেই। অনেকেই বলেন, তাদের লেখা বুঝতে পারেন কেবলমাত্র ওষুধের দোকানের কর্মীরাই। শুধু ভারতে নয়, এই ধারা বিশ্বের নানা দেশেই পরিচিত একটি হাস্যরসের বিষয়। কিন্তু এই বিষয়টি এবার গুরুত্ব সহকারে আলোচনায় এসেছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের এক রায়ের মাধ্যমে।

সম্প্রতি আদালত একটি মামলার শুনানিতে মন্তব্য করেছে, “সহজে পাঠযোগ্য ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, অস্পষ্ট লেখা অনেক সময় জীবন ও মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”

এটি এমন এক মামলার প্রেক্ষিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, যার মূল বিষয়বস্তু ছিল ধর্ষণ, প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগ। মামলায় অভিযোগকারী এক নারী দাবি করেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি তাকে সরকারি চাকরির লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়েছেন, ভুয়া সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এবং যৌন নির্যাতন করেছেন। অপরদিকে, অভিযুক্ত তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তাদের মধ্যে সম্মতিসূচক সম্পর্ক ছিল এবং মূলত টাকার বিরোধ থেকেই এই মামলা হয়েছে।

এই মামলায় বিচারপতি জসগুরুপ্রীত সিং পুরি যখন ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন খতিয়ে দেখেন, তখন তিনি চমকে ওঠেন প্রতিবেদনটি এতটাই দুর্বোধ্য যে একটি শব্দও স্পষ্টভাবে পড়া যাচ্ছিল না।

আদালতের আদেশে বিচারপতি লিখেছেন, “এই লেখাটি আদালতের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। কারণ, এটি এতটাই অস্পষ্ট ছিল যে বোঝা দুষ্কর। একটি শব্দও ঠিকমতো পড়া যাচ্ছিল না।”

বিবিসি এই রায়ের একটি কপি পর্যালোচনা করেছে, যেখানে আদালতে দাখিলকৃত সেই ডাক্তারি প্রতিবেদন এবং একটি দুই পৃষ্ঠার ব্যবস্থাপত্র যুক্ত ছিল। সেখানে ডাক্তারের লেখা হিজিবিজি এবং অস্পষ্ট বলে উল্লেখ করা হয়।

বিচারপতি আরও মন্তব্য করেন, “যখন প্রযুক্তি এবং কম্পিউটার এত সহজলভ্য, তখনো কেন সরকারি চিকিৎসকেরা এমন হাতের লেখা ব্যবহার করছেন, যা শুধু ওষুধের দোকানের কর্মীরাই বুঝতে পারেন? এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

এই প্রেক্ষাপটে আদালত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে মেডিকেল কলেজগুলোর পাঠ্যক্রমে হাতের লেখার (হ্যান্ডরাইটিং) প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করতে হবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল ব্যবস্থাপত্র ব্যবস্থা চালু করতে হবে। ততদিন পর্যন্ত সব ডাক্তারকে স্পষ্টভাবে বড় হাতের অক্ষরে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে।

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (IMA) প্রেসিডেন্ট ড. দিলীপ ভানুশালী বলেছেন, তারা এই সমস্যার সমাধানে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তিনি জানান, সংগঠনটির সদস্য সংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।