ঢাকা ১২:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

ভিসা বাতিলের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার অভিযোগ কলম্বিয়া প্রেসিডেন্ট পেত্রোর

মার্কিন ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

গত শুক্রবার নিউইয়র্কে একটি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে পেত্রো মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে বলেন, তারা যেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ না মেনে মানবতার পক্ষে অবস্থান নেয়। এই মন্তব্যের পরই যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিলের ঘোষণা দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় পেত্রো লেখেন, “এখন আমার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ভিসা নেই কিন্তু আমি তা নিয়ে চিন্তিত নই। আমার ভিসার দরকার নেই। আমি শুধু কলম্বিয়ান নই, ইউরোপীয় নাগরিকও। আমি নিজেকে বিশ্বের একজন স্বাধীন মানুষ মনে করি।”

তিনি আরও বলেন, “গাজায় (ইসরায়েলের) জাতিগোষ্ঠী হত্যার নিন্দা করার কারণে আমার ভিসা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে যে তারা আর আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করছে না।”

ইসরায়েল গাজায় জাতিগোষ্ঠী হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং দাবি করছে, হামাসের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা আত্মরক্ষা করছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় সব বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ও গবেষক এটিকে “জাতিগোষ্ঠী হত্যার” শামিল বলে উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে দেওয়া বক্তব্যে পেত্রো বিশ্বব্যাপী একটি ‘সশস্ত্র মানবতা রক্ষাকারী বাহিনী’ গঠনের আহ্বান জানান, যার মূল লক্ষ্য হবে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, পেত্রোর “বেপরোয়া ও উসকানিমূলক” কর্মকাণ্ডের কারণে তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

এর জবাবে কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “জাতিসংঘ যেখানে মতপ্রকাশের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, সেখানে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ভিসা বাতিল করা সংস্থাটির মূল চেতনার পরিপন্থি।”

উল্লেখ্য, পেত্রোর শাসনামলে কলম্বিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনেকটাই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত অভিবাসীদের ফেরত নেওয়ার ফ্লাইট বন্ধ করে দেন পেত্রো, যার ফলে ওয়াশিংটন থেকে শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি আসে। পরে উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছায়।

এছাড়া ২০২৪ সালে পেত্রো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং দেশটিতে কয়লা রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন।

চলতি বছরের জুলাইয়ে পেত্রো দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে। এর পরই উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। তবে ওয়াশিংটন এ অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দেয়।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

ভিসা বাতিলের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন ভাঙার অভিযোগ কলম্বিয়া প্রেসিডেন্ট পেত্রোর

আপডেট সময় : ০২:০৯:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

মার্কিন ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

গত শুক্রবার নিউইয়র্কে একটি ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করে পেত্রো মার্কিন সেনাদের উদ্দেশে বলেন, তারা যেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশ না মেনে মানবতার পক্ষে অবস্থান নেয়। এই মন্তব্যের পরই যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিলের ঘোষণা দেয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিক্রিয়ায় পেত্রো লেখেন, “এখন আমার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ভিসা নেই কিন্তু আমি তা নিয়ে চিন্তিত নই। আমার ভিসার দরকার নেই। আমি শুধু কলম্বিয়ান নই, ইউরোপীয় নাগরিকও। আমি নিজেকে বিশ্বের একজন স্বাধীন মানুষ মনে করি।”

তিনি আরও বলেন, “গাজায় (ইসরায়েলের) জাতিগোষ্ঠী হত্যার নিন্দা করার কারণে আমার ভিসা বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্র প্রমাণ করেছে যে তারা আর আন্তর্জাতিক আইনকে সম্মান করছে না।”

ইসরায়েল গাজায় জাতিগোষ্ঠী হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং দাবি করছে, হামাসের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা আত্মরক্ষা করছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় ৬৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং প্রায় সব বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জাতিসংঘসহ একাধিক মানবাধিকার সংস্থা ও গবেষক এটিকে “জাতিগোষ্ঠী হত্যার” শামিল বলে উল্লেখ করেছে।

জাতিসংঘ সদর দপ্তরের বাইরে দেওয়া বক্তব্যে পেত্রো বিশ্বব্যাপী একটি ‘সশস্ত্র মানবতা রক্ষাকারী বাহিনী’ গঠনের আহ্বান জানান, যার মূল লক্ষ্য হবে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করা।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, পেত্রোর “বেপরোয়া ও উসকানিমূলক” কর্মকাণ্ডের কারণে তার ভিসা বাতিল করা হয়েছে।

এর জবাবে কলম্বিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “জাতিসংঘ যেখানে মতপ্রকাশের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়, সেখানে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ভিসা বাতিল করা সংস্থাটির মূল চেতনার পরিপন্থি।”

উল্লেখ্য, পেত্রোর শাসনামলে কলম্বিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনেকটাই উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কৃত অভিবাসীদের ফেরত নেওয়ার ফ্লাইট বন্ধ করে দেন পেত্রো, যার ফলে ওয়াশিংটন থেকে শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞার হুমকি আসে। পরে উভয় পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছায়।

এছাড়া ২০২৪ সালে পেত্রো ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং দেশটিতে কয়লা রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন।

চলতি বছরের জুলাইয়ে পেত্রো দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দেশে অভ্যুত্থান ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে। এর পরই উভয় দেশ তাদের রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয়। তবে ওয়াশিংটন এ অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দেয়।