ঢাকা ১১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

চট্টগ্রাম ডিসি অফিসে স্বপনের রাজত্ব: পদে পদে জালিয়াতি ও দুর্নীতির মহোৎসব

ভুয়া কাগজপত্রে চাকরিতে প্রবেশ, বদলির আবেদনে মিথ্যা তথ্য।

বিধি ভেঙে ১৯ বছর ধরে এক শাখায় বহাল তবিয়তে কর্মচারী।

আইন পেশায় যুক্ত থেকে প্রবাসীদের ক্ষমতাপত্রে লাখ লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রেভিনিউ মুন্সিখানা (আরএম) শাখার কর্মচারী স্বপন কুমার দাশের বিরুদ্ধে একের পর এক জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় তিন দশক ধরে চাকরির ভেতরে-বাইরে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন অঘোষিত সাম্রাজ্য। শুধু সরকারি চাকরিই নয়, আইন ব্যবসায় যুক্ত হয়ে সাধারণ মানুষকে কোটি টাকার ক্ষতির মুখে ফেলেছেন তিনি।

স্বপনের গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ার সুখছড়ি হলেও ১৯৯১ সালে তিনি কক্সবাজার পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা পরিচয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেন। বিধিমালা অনুযায়ী অন্য জেলার বাসিন্দার চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ না থাকলেও ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে সরকারি চাকরি হাতিয়ে নেন তিনি।

চাকরির শুরুতে টেকনাফে বদলি হওয়ার পর চট্টগ্রামে আসতে একাধিকবার আবেদন করেন স্বপন। তখন স্ত্রীকে বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী ও স্কুলশিক্ষিকা পরিচয়ে ভুয়া তথ্য দেন তিনি। বিতর্কিত মতামতের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন।

২০০৬ সালের জুন থেকে আজ পর্যন্ত আরএম শাখা ছাড়েননি স্বপন দাশ। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী টানা তিন বছরের বেশি একই পদে থাকা অবৈধ হলেও প্রভাবশালী এক সাবেক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে তিনি দুই দশক ধরে শাখাটিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।

সরকারি চাকরি বিধি ভঙ্গ করে সক্রিয়ভাবে আইন ব্যবসা চালাচ্ছেন স্বপন দাশ। প্রবাসীদের দেওয়া ক্ষমতাপত্রে নানা অজুহাত দেখিয়ে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত হাতানোর অভিযোগ রয়েছে। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করছে অফিসের ভেতরেই বসানো দালাল জাবেদ।

অভিযোগ আছে, দুর্নীতির টাকায় ভারতে বাড়ি করেছেন স্বপন। শুধু তাই নয়, সরকারি জমি লিজ, নিলাম, ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ ও খাজনা আদায় সব ক্ষেত্রেই কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এমনকি হিলভিউ আবাসিকে সরকারি জমি হাতিয়ে দেওয়ার নেপথ্য কারিগরও স্বপন দাশ।

সেবাগ্রহীতারা জানান, স্বপন দাশ মামলার রায় গোপন রেখে সরকারের পক্ষে আপিল দায়ের করেন না। উল্টো কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাগজপত্র জটিল করেন। এতে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি সরকারও বঞ্চিত হয় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “স্বপন দাশ একাই নয়, ডিসি অফিসে আরও অনেকে বছরের পর বছর একই পদে বসে আছেন। প্রজ্ঞাপন থাকলেও বদলির নিয়ম এখানে কার্যকর হয় না।”

দুই দশক নামজারি বন্ধ রেখে হঠাৎ মাত্র দুই মাসে ১৭৮টি খতিয়ান সৃজন করেন স্বপন দাশ। অভিযোগ উঠেছে, এতে হাজার কোটি টাকার খাস জমি লুটপাটের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ভূমি অফিসের সহযোগিতায় হাউজিংয়ের নামে চট্টগ্রাম মহানগরীর হিলভিউ আবাসিকের ৪৬ একর জমি দখলের নেপথ্য কারিগরও তিনি।

এ বিষয়ে স্বপন কুমার দাশের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

চট্টগ্রাম ডিসি অফিসে স্বপনের রাজত্ব: পদে পদে জালিয়াতি ও দুর্নীতির মহোৎসব

আপডেট সময় : ১২:৩৪:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভুয়া কাগজপত্রে চাকরিতে প্রবেশ, বদলির আবেদনে মিথ্যা তথ্য।

বিধি ভেঙে ১৯ বছর ধরে এক শাখায় বহাল তবিয়তে কর্মচারী।

আইন পেশায় যুক্ত থেকে প্রবাসীদের ক্ষমতাপত্রে লাখ লাখ টাকা হাতানোর অভিযোগ।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের রেভিনিউ মুন্সিখানা (আরএম) শাখার কর্মচারী স্বপন কুমার দাশের বিরুদ্ধে একের পর এক জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রায় তিন দশক ধরে চাকরির ভেতরে-বাইরে নানা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন অঘোষিত সাম্রাজ্য। শুধু সরকারি চাকরিই নয়, আইন ব্যবসায় যুক্ত হয়ে সাধারণ মানুষকে কোটি টাকার ক্ষতির মুখে ফেলেছেন তিনি।

স্বপনের গ্রামের বাড়ি লোহাগাড়ার সুখছড়ি হলেও ১৯৯১ সালে তিনি কক্সবাজার পৌরসভার স্থায়ী বাসিন্দা পরিচয়ে চাকরিতে প্রবেশ করেন। বিধিমালা অনুযায়ী অন্য জেলার বাসিন্দার চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ না থাকলেও ভুয়া ঠিকানা দেখিয়ে সরকারি চাকরি হাতিয়ে নেন তিনি।

চাকরির শুরুতে টেকনাফে বদলি হওয়ার পর চট্টগ্রামে আসতে একাধিকবার আবেদন করেন স্বপন। তখন স্ত্রীকে বহুজাতিক কোম্পানির কর্মী ও স্কুলশিক্ষিকা পরিচয়ে ভুয়া তথ্য দেন তিনি। বিতর্কিত মতামতের ভিত্তিতে শেষ পর্যন্ত ২০০৩ সালে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে আসেন।

২০০৬ সালের জুন থেকে আজ পর্যন্ত আরএম শাখা ছাড়েননি স্বপন দাশ। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী টানা তিন বছরের বেশি একই পদে থাকা অবৈধ হলেও প্রভাবশালী এক সাবেক মন্ত্রীর নাম ভাঙিয়ে তিনি দুই দশক ধরে শাখাটিকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন।

সরকারি চাকরি বিধি ভঙ্গ করে সক্রিয়ভাবে আইন ব্যবসা চালাচ্ছেন স্বপন দাশ। প্রবাসীদের দেওয়া ক্ষমতাপত্রে নানা অজুহাত দেখিয়ে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত হাতানোর অভিযোগ রয়েছে। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করছে অফিসের ভেতরেই বসানো দালাল জাবেদ।

অভিযোগ আছে, দুর্নীতির টাকায় ভারতে বাড়ি করেছেন স্বপন। শুধু তাই নয়, সরকারি জমি লিজ, নিলাম, ক্ষতিপূরণের চেক বিতরণ ও খাজনা আদায় সব ক্ষেত্রেই কমিশন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়েছেন তিনি। এমনকি হিলভিউ আবাসিকে সরকারি জমি হাতিয়ে দেওয়ার নেপথ্য কারিগরও স্বপন দাশ।

সেবাগ্রহীতারা জানান, স্বপন দাশ মামলার রায় গোপন রেখে সরকারের পক্ষে আপিল দায়ের করেন না। উল্টো কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাগজপত্র জটিল করেন। এতে সাধারণ মানুষ যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তেমনি সরকারও বঞ্চিত হয় কোটি টাকার রাজস্ব থেকে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “স্বপন দাশ একাই নয়, ডিসি অফিসে আরও অনেকে বছরের পর বছর একই পদে বসে আছেন। প্রজ্ঞাপন থাকলেও বদলির নিয়ম এখানে কার্যকর হয় না।”

দুই দশক নামজারি বন্ধ রেখে হঠাৎ মাত্র দুই মাসে ১৭৮টি খতিয়ান সৃজন করেন স্বপন দাশ। অভিযোগ উঠেছে, এতে হাজার কোটি টাকার খাস জমি লুটপাটের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ভূমি অফিসের সহযোগিতায় হাউজিংয়ের নামে চট্টগ্রাম মহানগরীর হিলভিউ আবাসিকের ৪৬ একর জমি দখলের নেপথ্য কারিগরও তিনি।

এ বিষয়ে স্বপন কুমার দাশের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।