
মাদারীপুরে পরিবেশের উন্নয়ন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষনের জন্য ৫ বছর আগে ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে আধুনিক ইকোপার্ক নির্মাণ কাজ শুরু করে সামাজিক বন বিভাগ। কয়েক দফা বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয় তিন মাস আগে। কিন্তু জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরনের অর্থ না পাওয়ায় ১০ মাস আগে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার। স্থানীয়দের বাধার মুখে ভয়ে চলে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসহায় সামাজিক বন বিভাগ। অবশ্য এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
জানা যায়, জেলাবাসীর বিনোদনের খোরাগ জোগাতে আর আড়াই হাজার বানরকে খাঁচায় বন্দি করতে মাদারীপুরে নির্মাণ শুরু হয় আধুনিক ইকোপার্ক। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সম্পন্ন হয়নি নির্মাণ কাজ। সদর উপজেলার কুমড়াখালী মৌজার কুমার নদের পাড়ে নয়াচর এলাকায় ইকোপার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সামাজিক বন বিভাগ। প্রথম পর্যায়ে ৩১ কোটি ৭৪ লাখ টাকার অনুমোদন পেলে, পরে সংশোধনে তা বেড়ে দাড়ায় ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। ২০২০ সালে শুরু হওয়া নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দেয় এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরনের অর্থ না দিলে আর করতে দেয়া হবে না প্রকল্পের কাজ। বাধার মুখে চলে গেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানও।
তথ্য বলছে, ক্ষতিগ্রস্থ ২৪টি পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে জেলা প্রশাসনের ভুমি অধিগ্রহণ শাখায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা জমা দিয়েছে সামাজিক বন বিভাগ। কাগজপত্র যাছাইবাছাই শেষে এই অর্থ প্রদান করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। ইকোপার্কের নির্মাণ কাজ শেষে এটি চালু হলে একদিকে বাড়বে জেলার পরিচিতি, অন্যদিকে বেকারদের হবে কর্মসংস্থান। তাই সব জটিলতা কাটিয়ে এটি দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও বিনোদনপ্রেমীর। এমন পরিস্থিতিতে অনেকটাই অসহায় সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তা। অবশ্য, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ^াস উপজেলা প্রশাসনের।
বন বিভাগের তথ্য মতে, আধুনিক ইকোপার্ক প্রকল্প থাকছে বিশাল বাধাইকরা বড় একটি পুকুর। চারটি পিকনিক স্পট, বানরের আবাসস্থল ও চিকিৎসা কেন্দ্র, চিলড্রেন কর্ণার, বহুতল পানির ট্যাংক, অর্কিড হাউজ, তিন তলাবিশিষ্ট অফিস ভবন, ইত্যাদি।
ক্ষতিগ্রস্থ দেলোয়ার বেপারী বলেন, ‘কয়েকবার আশ^াস দিলেও আমরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না। একজন জেলা প্রশাসক আসে, আরেকজন যায়। তারা বদলি হলে আরো জটিলতা তৈরি। আমরা ২৪টি পরিবারের মধ্যে একটি পরিবার ক্ষতিপূরণ পলেও বাকি ২৩টি পরিবার কবে আলোর মুখ দেখবে সেটিই এখন বড় প্রশ্ন!
আরেক ক্ষতিগ্রস্থ নাসির মোল্লা বলেন, ‘আমাদের জমির ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইকোপার্কের কাজ প্রায় শেষের দিকে। আমরা ভুক্তভোগী সবাই বাধা দিয়েছি। আমাদের জমি অধিগ্রহনের ক্ষতিপূরণ না দিলে আর কাজ করতে দিবো না।
সুমি আক্তার বলেন, ‘সরকার আমাদের জমি নিয়েছে, কিন্তু তার বিনিময়ে আমাদের কোন ক্ষতিপূরণই দেয়নি। আমরা সারজীবনের জমি হারিয়েছি, এর প্রাপ্য অর্থ পেলে খুশি হতাম। তা না হলে সবাই মিলে আন্দোলনে নামবো।’
সামাজিক বন বিভাগ-এর মাদারীপুর অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বন বিভাগের প্রশাসনকে ক্ষতিপূরনের অর্থ দিলেও তা পাচ্ছে না ক্ষতিগ্রস্থরা। কাগজপত্র জটিলতা ও উচ্চ আদালতে একটি রিট থাকায় এই সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এই ইকোপার্কের কার্যক্রমের চালু করতে উচ্চ পর্যায়ে একটি কমিটি গঠন হয়েছে, সেই কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, ‘স্থানীয়দের বাধার কারনে ইকোপার্ক নির্মানের কার্যক্রম আপতত বন্ধ রয়েছে। এটি দ্রুত চালু করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে। যা জেলাবাসী বিনোদন থেকে বঞ্চিত না হয়, আর বন্যপ্রানীদেরও একস্থানে বন্দি করে রাখা যায়।