ঢাকা ০৩:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা, ২২ দিন ইলিশসহ সব মাছ ধরা নিষিদ্ধ, জেলেদের জন্য সহায়তার দাবি উঠলো

সরকার ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে শনিবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য দেশব্যাপী ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সময়ে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ, মজুদ ও বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে।

কুয়াকাটা, মহিপুর ও আলীপুর এলাকার সমুদ্রগামী জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মানার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং তাদের ট্রলার নিরাপদ স্থানে রেখেছেন। এছাড়া এই সময়ে ট্রলার মেরামতসহ অন্যান্য কাজও সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছেন স্থানীয় জেলেরা।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিস জানায়, নিষেধাজ্ঞা মানলে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারবে, যা পরবর্তী প্রজন্মের ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে এবং জাতির প্রিয় মাছের বংশবিস্তার নিশ্চিত হবে।

কুয়াকাটার জেলেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এই অবরোধ মেনে চলছেন, তবে মাছ না ধরায় জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কলাপাড়ার ইউনিয়ন পরিষদগুলো জানিয়েছে, ২০০৭ সালের পর থেকে জেলেদের কোনো নিবন্ধন হয়নি। বর্তমানে মোট ১৮ হাজার ৩০৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে, কিন্তু তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় সহায়তা বিতরণে অসঙ্গতি দেখা দেয়।

লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সওকত হোসেন বিশ্বাস বলেন, অনেক পুরনো নাম থাকলেও অনেক নতুন জেলেকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়নি, তাই দ্রুত তালিকা হালনাগাদের দাবি তিনি জানিয়েছেন।

আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলে ফারুক মাঝি মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আরও ১০ দিন বাড়ানো উচিত, কারণ এই সময় ইলিশ ডিমওয়ালা অবস্থায় সাগরে ধরা পড়ে, যা প্রজননের স্বার্থে ক্ষতিকর।

ইলিশ ব্যবসায়ী জলিল ঘরামি জানান, ইলিশ মৌসুমের বড় অংশে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। নিম্নচাপের সময় সমুদ্র উত্তাল হয় এবং তারা ট্রলার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়, ফলে তাদের ক্ষতি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ইলিশ সংরক্ষণে প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা জরুরি, তবে প্রকৃত জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করে সহায়তা বিতরণে স্বচ্ছতা আনা না হলে দীর্ঘমেয়াদে কর্মসূচির সফলতা কঠিন হবে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রকৃত জেলেদের সহায়তা নিশ্চিত করতেই তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবরই মূল প্রজননকাল।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা

আপডেট সময় : ০৫:৩০:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ অক্টোবর ২০২৫

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা, ২২ দিন ইলিশসহ সব মাছ ধরা নিষিদ্ধ, জেলেদের জন্য সহায়তার দাবি উঠলো

সরকার ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে শনিবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাত থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের জন্য দেশব্যাপী ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই সময়ে নদী ও সমুদ্রে মাছ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ, মজুদ ও বাজারজাতকরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে।

কুয়াকাটা, মহিপুর ও আলীপুর এলাকার সমুদ্রগামী জেলেরা নিষেধাজ্ঞা মানার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন এবং তাদের ট্রলার নিরাপদ স্থানে রেখেছেন। এছাড়া এই সময়ে ট্রলার মেরামতসহ অন্যান্য কাজও সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করছেন স্থানীয় জেলেরা।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য অফিস জানায়, নিষেধাজ্ঞা মানলে মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারবে, যা পরবর্তী প্রজন্মের ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক হবে এবং জাতির প্রিয় মাছের বংশবিস্তার নিশ্চিত হবে।

কুয়াকাটার জেলেরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা এই অবরোধ মেনে চলছেন, তবে মাছ না ধরায় জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কলাপাড়ার ইউনিয়ন পরিষদগুলো জানিয়েছে, ২০০৭ সালের পর থেকে জেলেদের কোনো নিবন্ধন হয়নি। বর্তমানে মোট ১৮ হাজার ৩০৫ জন নিবন্ধিত জেলে রয়েছে, কিন্তু তালিকা হালনাগাদ না হওয়ায় সহায়তা বিতরণে অসঙ্গতি দেখা দেয়।

লালুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সওকত হোসেন বিশ্বাস বলেন, অনেক পুরনো নাম থাকলেও অনেক নতুন জেলেকে সরকারি সহায়তার আওতায় আনা হয়নি, তাই দ্রুত তালিকা হালনাগাদের দাবি তিনি জানিয়েছেন।

আলীপুর মৎস্য বন্দরের জেলে ফারুক মাঝি মনে করেন, নিষেধাজ্ঞার সময় আরও ১০ দিন বাড়ানো উচিত, কারণ এই সময় ইলিশ ডিমওয়ালা অবস্থায় সাগরে ধরা পড়ে, যা প্রজননের স্বার্থে ক্ষতিকর।

ইলিশ ব্যবসায়ী জলিল ঘরামি জানান, ইলিশ মৌসুমের বড় অংশে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারে না। নিম্নচাপের সময় সমুদ্র উত্তাল হয় এবং তারা ট্রলার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়, ফলে তাদের ক্ষতি বেড়ে যায়।

বাংলাদেশ মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, ইলিশ সংরক্ষণে প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা জরুরি, তবে প্রকৃত জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করে সহায়তা বিতরণে স্বচ্ছতা আনা না হলে দীর্ঘমেয়াদে কর্মসূচির সফলতা কঠিন হবে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে প্রকৃত জেলেদের সহায়তা নিশ্চিত করতেই তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবরই মূল প্রজননকাল।