ঢাকা ১১:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

চাকসু নির্বাচন, ৩৫ বছর পর ভোট উৎসব চবিতে

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, যা বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জীবনে প্রথমবার ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতায় উচ্ছ্বসিত অনেকেই বলছেন, এটি যেন ‘ঈদের মতো আনন্দের’ দিন।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। এ কেন্দ্রে মোট ৭ হাজার ৭৩ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে প্রীতিলতা হলের ২ হাজার ৫৫৫ জন, বিজয় ২৪ হলের ২ হাজার ৬০৪ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ১ হাজার ৭৬০ জন এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

ভোট দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিজয় ২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাইরুজ। তিনি বলেন, “আমি জীবনে প্রথমবার ভোট দিলাম। খুবই আনন্দ লাগছে। ৩৫ বছর পর এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে এক ধরনের গর্বও অনুভব করছি। আশা করি, এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা আরও জোরদার হবে।”

এদিকে সকাল ১০টার দিকে প্রকৌশল অনুষদ ভবনেও একই রকম চিত্র দেখা যায়। সেখানে ভোট দিচ্ছেন সোহরাওয়ার্দী হলের ৪ হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী। গরমের মধ্যেও লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ভোটাররা। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ইরফানুল ইসলাম বলেন, “অনেক গরম, তবুও কোনো অভিযোগ নেই। বরং ঈদের মতো আনন্দ লাগছে। এটা আমার জীবনের প্রথম ভোট, তাই অনুভূতিটা বিশেষ।”

চাকসু নির্বাচনে এবার অংশ নিচ্ছে মোট ১৩টি প্যানেল। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ২৩২টি পদে লড়ছেন ৯০৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে নারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪৭ জন। নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৮ জন।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একজন ভোটারকে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে হবে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে। এ জন্য প্রতিজন ভোটারকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ব্যালট পেপারে ভোট হলেও গণনা হবে ‘ওএমআর’ (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে, যেখানে নির্দিষ্ট বৃত্তে মার্ক দিয়ে ভোট প্রদান করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর নানা কারণে আর নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেকে বলছেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা এবং নেতৃত্ব তৈরির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

কালিয়াকৈরে ভুল রক্ত পুশে সিজারের রোগীর মৃত্যু

চাকসু নির্বাচন, ৩৫ বছর পর ভোট উৎসব চবিতে

আপডেট সময় : ১১:৩৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় শুরু হয়েছে ভোটগ্রহণ, যা বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোট শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। জীবনে প্রথমবার ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতায় উচ্ছ্বসিত অনেকেই বলছেন, এটি যেন ‘ঈদের মতো আনন্দের’ দিন।

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। এ কেন্দ্রে মোট ৭ হাজার ৭৩ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে প্রীতিলতা হলের ২ হাজার ৫৫৫ জন, বিজয় ২৪ হলের ২ হাজার ৬০৪ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ১ হাজার ৭৬০ জন এবং শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেলের ১৫৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

ভোট দিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন বিজয় ২৪ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাইরুজ। তিনি বলেন, “আমি জীবনে প্রথমবার ভোট দিলাম। খুবই আনন্দ লাগছে। ৩৫ বছর পর এই ঐতিহাসিক নির্বাচনে অংশ নিয়ে এক ধরনের গর্বও অনুভব করছি। আশা করি, এর মাধ্যমে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক চর্চা আরও জোরদার হবে।”

এদিকে সকাল ১০টার দিকে প্রকৌশল অনুষদ ভবনেও একই রকম চিত্র দেখা যায়। সেখানে ভোট দিচ্ছেন সোহরাওয়ার্দী হলের ৪ হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী। গরমের মধ্যেও লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছেন ভোটাররা। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ইরফানুল ইসলাম বলেন, “অনেক গরম, তবুও কোনো অভিযোগ নেই। বরং ঈদের মতো আনন্দ লাগছে। এটা আমার জীবনের প্রথম ভোট, তাই অনুভূতিটা বিশেষ।”

চাকসু নির্বাচনে এবার অংশ নিচ্ছে মোট ১৩টি প্যানেল। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে ২৩২টি পদে লড়ছেন ৯০৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে নারী প্রার্থীর সংখ্যা মাত্র ৪৭ জন। নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৫১৮ জন।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একজন ভোটারকে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে হবে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে। এ জন্য প্রতিজন ভোটারকে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ব্যালট পেপারে ভোট হলেও গণনা হবে ‘ওএমআর’ (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) পদ্ধতিতে, যেখানে নির্দিষ্ট বৃত্তে মার্ক দিয়ে ভোট প্রদান করতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর নানা কারণে আর নির্বাচন হয়নি। দীর্ঘ সময় পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মাঝে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। অনেকে বলছেন, এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের চর্চা এবং নেতৃত্ব তৈরির নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে।