
চট্টগ্রামের হালদা নদীতে স্বাদু পানির গাঙ্গেয় ডলফিন বা শুশুকের মৃত্যু ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত আট বছরে নদীতে ৪৬টি ডলফিন মারা গেছে। এ মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে তারা আঘাত, মাছ ধরার জালে আটকা পড়া, চর্বি সংগ্রহের জন্য হত্যা, দূষণের প্রভাবে বিষক্রিয়া এবং প্রাকৃতিক মৃত্যু উল্লেখ করেছেন।
ডলফিন সংরক্ষণে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে ইন্দোনেশিয়ায় বিশ্বব্যাপী স্বাদু পানির ডলফিন দিবস পালনের ঘোষণা দেয়া হয়। বাংলাদেশেও প্রতিবছর ২৪ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়। চলতি বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক”, যা নদী দূষণ ও অন্যান্য হুমকি থেকে এই জলজ প্রাণীদের রক্ষা করার গুরুত্ব তুলে ধরে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির কো-অর্ডিনেটর প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া জানান, হালদার ডলফিন রক্ষায় এখনই পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তিনি বলেন, নদীকে ডলফিনের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা, যান্ত্রিক নৌকা ও ড্রেজার চলাচল বন্ধ করা, মাছ ধরা জাল নিষিদ্ধ করা, রাবারড্যাম অপসারণ, বন্যপ্রাণি ও মৎস্য আইন কার্যকর করা, নদী মনিটরিং করা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
গবেষকরা জানাচ্ছেন, নদীর নিম্নাংশ, খাল এবং অন্যান্য নদীর সংযোগস্থলগুলোতে ডলফিন বেশি দেখা যায়। গত আট বছরে মারা যাওয়া ডলফিনের ৯০ শতাংশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। জালে আটকা পড়া ডলফিন আধাঘণ্টার মধ্যে মুক্ত করা না হলে প্রায়ই মৃত্যু হয়।
বন্যপ্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, হালদা নদীকে সরকার হেরিটেজ ঘোষণা করলেও ডলফিন এখনও বিপদে আছে। তাই নদীর বাস্তুতন্ত্র বজায় রেখে যে কোনো উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, গাঙ্গেয় ডলফিন নদীর বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এটি নদীর খাদ্য শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে এবং অন্যান্য জলজ বিপন্ন প্রাণীর জীবন ও স্থানীয় মানুষের জীবনধারণে প্রভাব ফেলে। হালদা নদীতে ২০১৮ সালে ডলফিনের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬৭টি, ২০২০ সালে কমে ১২৭টি হয়, যার মধ্যে ৩৩টি মারা গেছে। সর্বশেষ ২০২২ সালের জরিপে হালদায় প্রায় ১৪৭টি ডলফিন পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের প্রধান নদীতে শুশুক সবচেয়ে পরিচিত, যা মিঠা পানিতে বাস করে। এছাড়া ইরাবতী ডলফিন এবং মাঝে মাঝে গোলাপি ডলফিনও দেখা যায়। শুশুক নদীর বাস্তুতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী, হালদা ও সাঙ্গু নদীর প্রায় সব জায়গায় পাওয়া যায়।
ডেস্ক নিউজ/নিউজ টুডে 






















