
ফুসফুসের ক্যানসারকে সবচেয়ে নীরব ও প্রাণঘাতী ক্যানসারগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, এটি শরীরের ভেতরে ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করে এবং প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো স্পষ্ট লক্ষণ প্রকাশ পায় না। অনেক সময় এসব উপসর্গ সাধারণ সর্দি-কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ভেবে উপেক্ষা করা হয়। ফলে রোগ ধরা পড়ে অনেক দেরিতে, তখন চিকিৎসাও জটিল হয়ে পড়ে।
চিকিৎসকদের মতে, কিছু সাধারণ উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন থাকলে ফুসফুসের ক্যানসার আগেভাগেই শনাক্ত করা সম্ভব। নিচে এমন পাঁচটি লক্ষণের কথা তুলে ধরা হলো,
১. তিন সপ্তাহের বেশি স্থায়ী কাশি
যদি কাশি তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে থাকে এবং কোনো চিকিৎসাতেও সারে না, তবে তা ফুসফুসে ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। টিউমার শ্বাসনালিতে জ্বালা সৃষ্টি করে দীর্ঘস্থায়ী কাশির কারণ হয়ে উঠতে পারে। কাশির প্রকৃতি যদি বদলে যায় বা বাড়ে, সঙ্গে রক্ত আসে তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
২. হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া ও অতিরিক্ত অবসাদ
কারণ ছাড়া ওজন দ্রুত কমে যাওয়া বা সারাক্ষণ ক্লান্ত অনুভব করাও ক্যানসারের একটি সম্ভাব্য লক্ষণ। শরীর যখন ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তখন অতিরিক্ত শক্তি খরচ হয়, যা ওজন কমা ও অবসাদের কারণ হতে পারে। এমন উপসর্গ দেখা দিলে বিষয়টি অবহেলা না করে পরীক্ষা করানো উচিত।
৩. স্বরে পরিবর্তন বা গলার কর্কশতা
গলা ভাঙা, কর্কশতা বা স্বরের পরিবর্তন যদি দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তবে তা ফুসফুস ক্যানসারের কারণে হতে পারে। ক্যানসার টিউমার ভোকাল কর্ডের স্নায়ুতে চাপ সৃষ্টি করলে এই উপসর্গ দেখা দেয়। কাশি বা বুকব্যথার সঙ্গে এমন সমস্যা হলে তা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
৪. শ্বাসকষ্ট বা নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা
সাধারণ কাজকর্মের সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হলে বা হাঁটার সময় হাপিয়ে গেলে সেটি ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাসের ইঙ্গিত হতে পারে। টিউমার শ্বাসনালিকে সংকুচিত করলে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়। অনেকেই এটিকে বয়স বা স্থূলতার দোষ দিয়ে এড়িয়ে যান। অথচ সময়মতো পরীক্ষা করালে এটি সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব।
৫. অজানা বুক বা কাঁধে ব্যথা
যদি কোনো কারণ ছাড়া বুক বা কাঁধে ব্যথা অনুভূত হয়, বিশেষ করে যখন তা হাসা, কাশি বা শ্বাস নেওয়ার সময় বাড়ে—তাহলে তা ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে। টিউমার আশপাশের স্নায়ু বা গঠনকে চাপ দিলে এমন ব্যথা হতে পারে। কাশির পাশাপাশি যদি ওজন কমে যাওয়ার মতো উপসর্গও থাকে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এই উপসর্গগুলোর প্রতিটি ক্যানসারের নিশ্চিত লক্ষণ নয় তবে উপসর্গগুলো দীর্ঘদিন থাকলে তা অবহেলা না করে চিকিৎসা করানো উচিত। প্রাথমিক পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত হলে তা অনেক বেশি কার্যকরভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব। তাই সাবধানতা ও সচেতনতা জীবন বাঁচাতে পারে।