ঢাকা ০২:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ অক্টোবর ২০২৫, ৫ কার্তিক ১৪৩২

সময় থাকতেই হাড়ের যত্ন নিন, অস্টিওপোরোসিস রোধে করণীয়

ছবি : সংগৃহীত

একটি নির্দিষ্ট বয়স পার হওয়ার পর অনেক মানুষ, বিশেষ করে নারীরা, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এই রোগের শুরুতে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। বেশিরভাগ সময় হাড় ভেঙে যাওয়ার পরই ধরা পড়ে রোগটি, তখন চিকিৎসার অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্টিওপোরোসিসজনিত হাড়ভাঙা একজন প্রবীণকে দীর্ঘ সময় বিছানায় শায়িত করে রাখতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হলেও, নারীদের মধ্যে রোগটির হার অনেক বেশি, বিশেষ করে ৫০ বছরের পর।

হাড়ের প্রধান গঠন উপাদান হলো ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন-ডি। এই তিনটির যেকোনো একটির অভাব হলেই হাড় নরম হতে শুরু করে, যা পরে ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই শৈশব ও কৈশোর থেকেই এসব উপাদানের সঠিক জোগান নিশ্চিত করা জরুরি, কারণ হাড়ের মূল ভিত্তি তৈরি হয় তরুণ বয়সেই।

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে খাদ্য ও জীবনযাপন

১. আমিষযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি
আমিষ হাড় ও পেশি শক্তিশালী করে। প্রতিদিন ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও ডালজাতীয় খাবার খান।

২. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
শিমের বিচি, বাদাম, মটরশুঁটি, ডাল, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি খাবার, কাঁটাসহ ছোট মাছ।
এসব খাবার প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখলে হাড় শক্ত থাকবে।

৩. ভিটামিন–সি গ্রহণ করুন
ভিটামিন–সি হাড়ের সংযোগস্থলে থাকা কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, যা হাড়ের ক্ষয় ঠেকায়। পেয়ারা, আমলকী, জাম্বুরা, আমড়া ইত্যাদি দেশীয় টকজাতীয় ফল প্রতিদিন খান।

৪. জিংক গ্রহণ করুন প্রাণিজ উৎস থেকে
জিংক হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ভালো উৎস: সামুদ্রিক মাছ, লাল মাংস, দুধ, ডিম, বাদাম, চিংড়ি, চিয়া সিড, সূর্যমুখীর বীজ।
শাকসবজিতে জিংক থাকলেও শরীর সহজে শোষণ করতে পারে না। তাই প্রাণিজ উৎসই বেশি কার্যকর।

৫. ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার
ওমেগা–৩ হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভালো উৎস: তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, চিয়া সিড, সূর্যমুখীর বীজ, মাছের তেল।

৬. ভিটামিন–ডি গ্রহণ করুন সূর্য থেকে
ভিটামিন–ডির প্রায় ৭০ শতাংশ আসে সূর্যের আলো থেকে। প্রতিদিন অন্তত ১৫–২০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকুন।
খাবার থেকে পাওয়া যায়: ডিমের কুসুম, মাছের তেল, গরুর কলিজা, তেলযুক্ত মাছ, মাশরুম।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তুলুন: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, হাঁটুন বা হালকা ওজন বহনের ব্যায়াম করুন, ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি ঘাটতি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ সম্ভব যদি সময় থাকতেই হাড়ের যত্ন শুরু করা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু শরীরের নয়, হাড়েরও প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবস আজ

সময় থাকতেই হাড়ের যত্ন নিন, অস্টিওপোরোসিস রোধে করণীয়

আপডেট সময় : ১২:৩৫:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫

একটি নির্দিষ্ট বয়স পার হওয়ার পর অনেক মানুষ, বিশেষ করে নারীরা, অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ক্ষয় রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এই রোগের শুরুতে সাধারণত কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। বেশিরভাগ সময় হাড় ভেঙে যাওয়ার পরই ধরা পড়ে রোগটি, তখন চিকিৎসার অনেকটাই দেরি হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্টিওপোরোসিসজনিত হাড়ভাঙা একজন প্রবীণকে দীর্ঘ সময় বিছানায় শায়িত করে রাখতে পারে। নারী-পুরুষ উভয়ই এই রোগে আক্রান্ত হলেও, নারীদের মধ্যে রোগটির হার অনেক বেশি, বিশেষ করে ৫০ বছরের পর।

হাড়ের প্রধান গঠন উপাদান হলো ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ভিটামিন-ডি। এই তিনটির যেকোনো একটির অভাব হলেই হাড় নরম হতে শুরু করে, যা পরে ভঙ্গুর হয়ে যায়। তাই শৈশব ও কৈশোর থেকেই এসব উপাদানের সঠিক জোগান নিশ্চিত করা জরুরি, কারণ হাড়ের মূল ভিত্তি তৈরি হয় তরুণ বয়সেই।

অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে খাদ্য ও জীবনযাপন

১. আমিষযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি
আমিষ হাড় ও পেশি শক্তিশালী করে। প্রতিদিন ডিম, মাছ, মাংস, দুধ ও ডালজাতীয় খাবার খান।

২. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
শিমের বিচি, বাদাম, মটরশুঁটি, ডাল, দুধ ও দুধ থেকে তৈরি খাবার, কাঁটাসহ ছোট মাছ।
এসব খাবার প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় রাখলে হাড় শক্ত থাকবে।

৩. ভিটামিন–সি গ্রহণ করুন
ভিটামিন–সি হাড়ের সংযোগস্থলে থাকা কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে, যা হাড়ের ক্ষয় ঠেকায়। পেয়ারা, আমলকী, জাম্বুরা, আমড়া ইত্যাদি দেশীয় টকজাতীয় ফল প্রতিদিন খান।

৪. জিংক গ্রহণ করুন প্রাণিজ উৎস থেকে
জিংক হাড়ের গঠন ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ভালো উৎস: সামুদ্রিক মাছ, লাল মাংস, দুধ, ডিম, বাদাম, চিংড়ি, চিয়া সিড, সূর্যমুখীর বীজ।
শাকসবজিতে জিংক থাকলেও শরীর সহজে শোষণ করতে পারে না। তাই প্রাণিজ উৎসই বেশি কার্যকর।

৫. ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার
ওমেগা–৩ হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ভালো উৎস: তৈলাক্ত সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, চিয়া সিড, সূর্যমুখীর বীজ, মাছের তেল।

৬. ভিটামিন–ডি গ্রহণ করুন সূর্য থেকে
ভিটামিন–ডির প্রায় ৭০ শতাংশ আসে সূর্যের আলো থেকে। প্রতিদিন অন্তত ১৫–২০ মিনিট সূর্যের আলোয় থাকুন।
খাবার থেকে পাওয়া যায়: ডিমের কুসুম, মাছের তেল, গরুর কলিজা, তেলযুক্ত মাছ, মাশরুম।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়ে তুলুন: নিয়মিত ব্যায়াম করুন, হাঁটুন বা হালকা ওজন বহনের ব্যায়াম করুন, ধূমপান ও অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন-ডি ঘাটতি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট নিতে পারেন। অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ সম্ভব যদি সময় থাকতেই হাড়ের যত্ন শুরু করা যায়। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুধু শরীরের নয়, হাড়েরও প্রয়োজন পড়ে বাড়তি যত্নের।