ঢাকা ০৮:০৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২

রেলওয়ের টেম্পিং কাজে দুর্নীতির গন্ধ, কোটি টাকার ক্ষতির দায়ে প্রশ্নবিদ্ধ সুবক্তগীন

বাংলাদেশ রেলওয়ের টেম্পিং ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম সিআরবি অঞ্চলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ঠিকাদারকে বিনামূল্যে টেম্পিং মেশিন দেওয়ায় সরকার প্রায় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক- সিজিএ’র নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই অনিয়মের জন্য তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীনের গাফিলতি ও দুর্নীতির দায়ভার চাপানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তিপত্রে Employer Risk portion দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিনামূল্যে মেশিন সরবরাহ করা হয়। অথচ একই সময়ে অন্য চুক্তিতে প্রতি কিলোমিটার টেম্পিং ভাড়া ৪০ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী SR-2013 সিডিউল অনুসারে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া প্রাক্কলনে অন্তর্ভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি। এভাবে ঠিকাদারকে সরাসরি আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আর সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোডের ধারা ১০৩ অনুযায়ী প্রধান প্রকৌশলী তার বিভাগের সব ব্যয়ের জন্য দায়ী থাকবেন। কিন্তু এখানে সেই দায়িত্ব পালন না করে উল্টো সরকারি অর্থ অপচয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

নিরীক্ষা মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে- ভাড়া অন্তর্ভুক্ত না করেই চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে, যা সরকারের কোটি টাকার ক্ষতির সমান।

এমনকি টেম্পিং কাজের অন্য প্রকল্পগুলোতেও দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন সেকশনে কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে কাজের পরিমাণ তারচেয়ে অনেক কম। যেমন, এক চুক্তিতে ২২ লাখ টাকার বেশি খরচ দেখানো হলেও প্রকৃত কাজ হয়েছে মাত্র ১৯.৬৫০ কিলোমিটার। অন্য একটি চুক্তিতে ৯৮.৮৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

নথিপত্রে দেখা যায়, Advance Rail Track Solution Bangladesh Limited ও Alahee International নামের একই প্রতিষ্ঠান বারবার একাধিক চুক্তি পেয়েছে। এতে দরপত্র প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি চুক্তিতে ৩০ হাজার টাকা হারে অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হলেও কাজের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। কাগজে-কলমে রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও যাত্রীদের অভিযোগ, রেললাইনের পুরনো সমস্যা রয়ে গেছে, ট্রেন চলাচলও আগের মতো বিলম্বিত হচ্ছে।

সব মিলিয়ে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীনের বিরুদ্ধে দায়সারা মনোভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জোরালো হয়েছে। সরকারি তহবিল থেকে কোটি টাকার অপচয়ের ঘটনায় তাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা বিভাগ।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

দেশের গর্ব সেনাবাহিনীকে নিয়ে শফিক তুহিনের হৃদয়স্পর্শী গান

রেলওয়ের টেম্পিং কাজে দুর্নীতির গন্ধ, কোটি টাকার ক্ষতির দায়ে প্রশ্নবিদ্ধ সুবক্তগীন

আপডেট সময় : ০৬:২২:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ নভেম্বর ২০২৫

বাংলাদেশ রেলওয়ের টেম্পিং ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। চট্টগ্রাম সিআরবি অঞ্চলে ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ঠিকাদারকে বিনামূল্যে টেম্পিং মেশিন দেওয়ায় সরকার প্রায় ৪৮ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। বাংলাদেশ মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক- সিজিএ’র নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এই অনিয়মের জন্য তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীনের গাফিলতি ও দুর্নীতির দায়ভার চাপানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তিপত্রে Employer Risk portion দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিনামূল্যে মেশিন সরবরাহ করা হয়। অথচ একই সময়ে অন্য চুক্তিতে প্রতি কিলোমিটার টেম্পিং ভাড়া ৪০ হাজার টাকা ধরা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী SR-2013 সিডিউল অনুসারে ৩০ হাজার টাকা ভাড়া প্রাক্কলনে অন্তর্ভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা করা হয়নি। এভাবে ঠিকাদারকে সরাসরি আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে, আর সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোডের ধারা ১০৩ অনুযায়ী প্রধান প্রকৌশলী তার বিভাগের সব ব্যয়ের জন্য দায়ী থাকবেন। কিন্তু এখানে সেই দায়িত্ব পালন না করে উল্টো সরকারি অর্থ অপচয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে।

নিরীক্ষা মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে- ভাড়া অন্তর্ভুক্ত না করেই চুক্তি সম্পাদন করা হয়েছে, যা সরকারের কোটি টাকার ক্ষতির সমান।

এমনকি টেম্পিং কাজের অন্য প্রকল্পগুলোতেও দুর্নীতির ছাপ স্পষ্ট। চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জসহ বিভিন্ন সেকশনে কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও বাস্তবে কাজের পরিমাণ তারচেয়ে অনেক কম। যেমন, এক চুক্তিতে ২২ লাখ টাকার বেশি খরচ দেখানো হলেও প্রকৃত কাজ হয়েছে মাত্র ১৯.৬৫০ কিলোমিটার। অন্য একটি চুক্তিতে ৯৮.৮৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

নথিপত্রে দেখা যায়, Advance Rail Track Solution Bangladesh Limited ও Alahee International নামের একই প্রতিষ্ঠান বারবার একাধিক চুক্তি পেয়েছে। এতে দরপত্র প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিটি চুক্তিতে ৩০ হাজার টাকা হারে অগ্রিম বিল পরিশোধ করা হলেও কাজের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। কাগজে-কলমে রক্ষণাবেক্ষণের নামে কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও যাত্রীদের অভিযোগ, রেললাইনের পুরনো সমস্যা রয়ে গেছে, ট্রেন চলাচলও আগের মতো বিলম্বিত হচ্ছে।

সব মিলিয়ে তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুবক্তগীনের বিরুদ্ধে দায়সারা মনোভাব, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ জোরালো হয়েছে। সরকারি তহবিল থেকে কোটি টাকার অপচয়ের ঘটনায় তাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা বিভাগ।